নীলচিত্রের বিবর্তন


-নীল ছবি কি?

-এইটা কোনো কথা..!! যেই ছবির রং নীল,তারেই নীল ছবি কয়। যেমন আকাশের ছবি,সাগরের ছবি হেন-তেন।

এখনকার জেনারেশনের কাছে নীল ছবি যতটা সহজলভ্য,আমাদের সময় সেইটা ছিলোনা বললেই চলে। বহুৎ দৌড়াদৌড়ি কইরা খায়েশ মিটাইতে হইতো।

নব্বইয়ের দশকে বাজারে সিডি আকারে পাওয়া যাইতো। ব্লু ফিল্মের সিডি। আমরা নানারকম সংকেতে ডাকতাম। ভূতের সিনেমা,বিজ্ঞাপন,বক্কর আরো কত কি..!!

একদিন এক বন্ধু কইলো,মামা,ভূতের সিনেমা দেখবি? দেখমুনা মানে? অবশ্যই..!! গিয়া দেখলাম সেইটা মডিফাইড ভুত। দরজা জানালা বন্ধ,রুদ্ধশ্বাসে ভুতের সিনেমা চলতেছিলো ভিসিআরে। কিন্তু মাঝপথে দরজায় টোকা পড়ে বন্ধুর বাপের। তরিঘরি কইরা টিভি আর ভিসিআর অফ করা হইলো,দরজাও খোলা হইলো কিন্তু সিডিটা বাইর করার কথা কারোরই মনে নাই।

- কি রে,দরজা জানলা বন্ধ কইরা সবাই কি করতাছোত?

- এইতো আব্বা,গল্প করি।

- এ্যামনে কেউ গল্প করে? দাঁড়া,তগোরে ভিসিআরে গান ছাইড়া দেই।

অতঃপর,বন্ধুর বাপের হাতে ভিসিআর অন,সুন্দর সুন্দর শব্দ এবং সবাই দৌড়াইয়া ঘর থেইকা বাইর হইয়া যাওয়া।
অলৌকিক ব্যাপার,সেই মুহূর্তে বন্ধু বড়ই চেস্টা করতেছিলো রিমোট দিয়ে ভিসিআর বন্ধ করার কিন্তু রিমোট কাজ করতেছিলোনা।

ওর বাপরে দেখছিলাম,কাঠের ডাসা লইয়া ঘরের ভেতরে ঢুকতে। আর কিছু জানিনা।

যখন হাই স্কুলে পড়ি তখন মাল্টিমিডিয়া সেট হাতে হাতে। সবার ব্যাগ কিংবা প্যান্টের চিপায়-চুপায় ফোন লুকায়িত থাকতো। স্যারেরা সেইসব ফোন ছিনতাইয়ের ধান্ধায় থাকতেন।

এর ওর কাছে দৌড়াদৌড়ি কইরা ব্লুটুথে ঘন্টার পর ঘন্টা লাগায়া তথ্য আদানপ্রদান চলতো।

তখন কম্পিউটার দোকানদারের ব্যবসা তুঙ্গে। বিশ-পঁচিশ টাকায় এক জিবি। বন্ধুমহলে যে যার থেইকা যত বেশি কালেকশন আর যত বেশি নায়ক-নায়িকার নাম মনে রাখতে পারে তার স্ট্যাটাস তত উপরে। আশিক বানায়ার মত গানও টু-এক্স এর সমপর্যায়ে ধরা হইতো।

একদিন এক বন্ধু ফোনসমেত ধরা খাইলো। স্যার ফোন নিয়া গেলেন। টিফিন পিরিয়ডে টিচার্স রুমে উঁকি দিয়া দেখি স্যার সেই ফোন হাতে কি জানি দেখতেছেন আর মিটমিটায়া হাসতেছেন।

সাইবার ক্যাফেগুলাতে পোলাপাইন ঢুকতো জোশ নিয়া,বাইর হইতো রুমাল দিয়া ঘাম মুছতে মুছতে। এমনও হইছে,একই ঘরের বড় ভাই ঘাম মুছতে মুছতে বাইর হইতাছে,পাশে তাকায়া দেখে ছোটভাইও ঘাম মুছতাছে।

২০১০ সালের দিকে RAB'রা আক্রমণ চালাইলো কম্পিউটারের দোকানগুলাতে। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে শতশত মামলা জমা হইলো। তখন ব্যবসাটা একটু নিমাইয়া গেছিলো। তের সালের দিকে পুরাপুরি নিমাইয়া গেলো। হাতে হাতে স্মার্টফোন,ওয়্যারলেস ডাটা কানেকশান আর শেয়ার ইট এ্যাপ যুগান্তকারী পরিবর্তন আনলো।

ইন্টারনেট দুনিয়া হঠাৎ কইরাই ছড়ায়া গেলো। পিসিগুলা ভরতে লাগলো হাই রেজুলেশনের জৈবিক ভিডিওতে।
স্ট্যাটাস নির্মিত হইতো,কার কাছে কত হাই রেজুলেশনের ভিডিও আছে আর সংগ্রহকারীর স্ট্যাটাস নির্মিত হইতো কে কত বেশি ডাউনলোড সাইটের নাম জানে।

একটা বয়সের পর সবাই ইন্ড্রাস্টিয়াল থেইকা দেশী হ্যান্ডমেড ভিডিওতে ঝুঁকে। কারণ,ব্রয়লার আর দেশি মুরগির মাংসের স্বাদে বিস্তর ফারাক। রমজান মাস আসলেই দেশের লাখ লাখ পিসির হার্ডডিস্ক খালি হইয়া যাইতো। পোলাপাইনের মুখে ডিলিট করার সময়ে শোকের ছায়া। ইস মামা,ফুল এইচ ডি ছিলো..!!

কোনো একটা ফোনের দিকে দুই-তিনজনের একসাথে তাকায় থাকা মানেই উল্টাপাল্টা কিছু দেখতাছে। তথাকথিত এক বন্ধু বছর দুই আগে ল্যাপটপে সৃজনশীল ভিডিও দেখতেছিলো। হঠাৎ ঘরে মা'র প্রবেশ। বন্ধুবর হতচকিত হইয়া ডিসপ্লে বন্ধ করছিলো বটে কিন্তু তাতে সাউন্ড বন্ধ হয়নাই। সাউন্ডবক্সে ব্যাকগ্রাউন্ড প্লেব্যাক ঠিকই চলতেছিলো।

মা'র আর্তচিক্কুর,আমার পোলা নষ্ট অইয়া গেছে। সব নুরজাহানের পোলার দোষ..!!

যাহাই হউক,এরকম হাজারো ঘটনা রূপকথার মত দেশের আনাচে কানাচে ছড়ায়া আছে। চটি বই থেইকা শুরু কইরা তথ্য প্রযুক্তির উন্নতির ফলে ঘটনাপ্রবাহ পরিবর্তন হইছে,কিন্তু রূপকথার ভিডিও এখনও চলতেছে। কারণ,৯৮শতাংশ টিনএজ ই নিষিদ্ধ বিষয়ে বুদ্ধির বিকাশ ঘটায়।

অনেকে নাক সিঁটকায় ঠিকই তবে সেটা জনগণের দ্বিতীয় চরিত্র। তাদের মতে,"আমি ভালো মানুষ,এসব দেখা ঠিক না।"
আমি আবার দ্বৈত চরিত্রে বিশ্বাসী না। কেননা,একদা তান্ত্রিক বন্ধু শিখাইছিলেন,
"যোগাসন ই হোক আর যৌনাসন ই হোক,দুইটাই সুস্থ জীবনের উদ্দেশ্য।"

প্রত্যুত্তরে আমি বুঝিয়াছিলাম,
"সকল ক্রিয়াই কর্ম আর সেক্স ই জৈবিক ধর্ম।"

No comments:

Post a Comment

পোস্টটির দর্শক সংখ্যা-

ফিচার পোস্ট

দারুণ তিনটি টিনেজ মুভি

কৈশোরেতে প্রেমে না পড়লে বুড়ো বয়সে আপসোস করতে হয়। বয়ঃসন্ধির নতুন জগৎ,নতুন অনুভূতি,ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো পরবর্তীতে দারুণ স্মৃতি হয়ে আজীবন রয়ে যায়...

সর্বাধিক পঠিত