ডেঙ্গীর চুম্বন


কোনো এক মেঘার্ত-সকালে যখন কলেজে না গিয়া লেপমুড়ি দিয়া মহাসুখে নিদ্রায় আছি ঠিক,তখনি যদি ফোনে রিং বাজিয়া উঠে,আর কল ধরিবামাত্রই ওপাশ থাকিয়া কোন এক কন্যা বলিয়া উঠে,

- হ্যালো আব্বা,কই তুমি?

আমি তড়াক করিয়া লাফাইয়া উঠিয়া চতুর্পাশে তাকাইয়া তৎক্ষণাৎ বুঝি,নহে,আমি অদ্যবধি অবিবাহিতই রহিয়াছি। আমার কোনো কন্যা নাই আর থাকিলেও তাহা স্মরণে নাই। জ্ঞানীদের আবার স্মরণশক্তি বেজায় কম থাকে।
সুতরাং,ফোন কাটিয়া পুনরায় লেপমুড়ি নিশ্চিন্তে দেওয়া যায়।

পশ্চাদদেশে সর্বদা নাকি সুখ সয় না। স্বয়ং তের তলায় আসিয়াই ডেঙ্গী হুল ফুটাইয়া গেলো। বেগানা মশকীর চুম্বনে দেহখানায় যখন যৌবনের স্রোত বহিতেছিলো,পিতা আমারে উঠাইয়া নারায়ণগঞ্জে নিয়া আসিলেন।

আট-দশদিন কোন ফুটা দিয়া উবিয়া গেলো,টেরই পাইলাম না। চোখ মেলিতেই দেখি সামনে স্যালাইনের ব্যাগ ঝুলিতেছে। মাঝে মাঝে দুপুরে জ্ঞান ফিরিলে টের পাইতাম,আমার একমাত্র মুখপানে যেন আরও দশখানা মুখ হাঁ করিয়া চাহিয়া আছে।

ডেঙ্গু হইয়াছে,কম কথা নহে..!!

কেহ কেহ অতি উৎসাহে আঙ্গুরের পরিমাণ দুই কেজিতে তুলিয়াছে। বলা যায় না,কাজেও লাগিতে পারে। রোগীর অন্তিমকালে আঙ্গুরের জুড়ি মেলা ভার।

নারায়ণগঞ্জ আবার "হাত বাড়াইলেই শাবনূর" টাইপের শহর। দেউড়িতে দাঁড়াইয়া হাঁক পাড়িলে চৌষট্টি জেলারই বাসিন্দার দেখা পাওয়া যায়। অচেতনাবস্থায় কোনো এক খালাকে বলিতে শুনিয়াছিলাম,
- আই উ মা গো,আমরার ফুতটারে গতবছর কি জ্বালানডাই না দিলো গো...!!

তৎক্ষণাৎ ফোঁসফোঁস সুরে আরেক কন্ঠ ভাসিয়া উঠে,
- আঁর কি মনে অয় ফাহিমোর মা,ছেম্রাডার মাইট্যা জন্ডিস অইছে। অ সিফাতোর মা,মাডি পড়া আইন্যা দিমু নি?

এলাকার মুরুব্বী পুরুষগণ সে তুলনায় বেশ সাহসী। বাতের ব্যাথায় নিজদিগের হাড্ডি একপাশে সড়াইয়া দিব্যি উপদেশ দিতেছেন,
- চিকুনগুনিয়া? এ আর এমন কি..!! স্যালাইন খা।

- টাইফয়েড অইছে? এ আর এমন কি..!! স্যালাইন খা।

- ডেঙ্গু অইছে? এ আর এমন কি..!! স্যালাইন খা।

সম্ভবত শেষ পর্যায়ে এরূপও হইতে পারিতো,
- এইডস অইছে? এ আর এমন কি..!! স্যালাইন খা।

সারারাত রাস্তায় ঘুরিলাম,বৃষ্টিতে ভিজিলাম,সাইকেল চালাইয়া ঘর্মাক্ত হইলাম,কিচ্ছুটি হইলো না। বেগানা এক মশকীর কামড়ে দেহখানা যেন লাড়া দিয়া গেলো।

এরেই বুঝি কহে,হাতি ঘোড়া গেলো তল,মশা কয় কত জল?

যাহাই হউক,আগামীকল্য প্রত্যাবর্তন করিতেছি। বিগত একমাস কলেজমুখো হইনাই। বাসায় ঘুমাইয়াছি। ভয় ছিলো,না জানি টিসি দিয়া দেয়। এখন আর সে ভয় নাই।

সঙ্গে হপ্তাখানেক আগের ডেঙ্গু আর চিকুনগুনিয়ার সার্টিফিকেট আছে। ঠিকঠাকমতো ফিটিং মারিতে পারিলে আরও একমাস ঘুমোনোর বন্দোবস্ত করা যায় বৈ কি..!!


No comments:

Post a Comment

পোস্টটির দর্শক সংখ্যা-

ফিচার পোস্ট

দারুণ তিনটি টিনেজ মুভি

কৈশোরেতে প্রেমে না পড়লে বুড়ো বয়সে আপসোস করতে হয়। বয়ঃসন্ধির নতুন জগৎ,নতুন অনুভূতি,ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো পরবর্তীতে দারুণ স্মৃতি হয়ে আজীবন রয়ে যায়...

সর্বাধিক পঠিত