বর্ণনা যাচ্ছেতাই-ভাবে পড়ে গেলেও ফিল্মজোড়া অন্তত যাচ্ছেতাই-ভাবে দেখা যাবে না। এ ধাঁচের বিনোদন আস্বাদনের দায়ভার দর্শকের নিজের উপর,অন্য কারো নয়।
NEKRomantik (1987)

'রবার্ট' ও তার স্ত্রী 'বেট্টি' দুজনেই নেক্রোফিলিয়া'তে আক্রান্ত(নেক্রোফিলিয়া হচ্ছে মৃতদেহের প্রতি যৌনাকর্ষণ।) সৌভাগ্যবশত,'রবার্ট' এমন একটি চাকরিতেই নিয়োজিত থাকে যেখানে কাজ হচ্ছে দূর্ঘটনায় কবলিত মৃতদেহ সরানো,তা পরিষ্কার এবং মর্গে পৌঁছে দেয়া। মৃতদেহগুলো সাধারণত এমন অবস্থায় থাকে যেখানে সেগুলো পঁচে-গলে গিয়েছে নয়তো দেহের কোন অংশ পাওয়া যাচ্ছে না। রবার্ট প্রায়ই সেসব মৃতদেহ অথবা বিচ্ছিন্ন অঙ্গগুলো বাড়ি নিয়ে আসে তার এবং তার স্ত্রীর উপভোগের জন্য। কিন্তু,পরবর্তীতে বিশেষ এক কারণে 'রবার্ট' তার চাকরি হারায়; স্ত্রী 'বেট্টি'ও তাকে ত্যাগ করে। দিনে দিনে রবার্টের অসুস্থ মানসিকতা চূড়ান্ত পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়ায়,ফলশ্রুতিতে সে যৌন উত্তেজনা মেটাতে নিজেকেই নিজে খুন করে।
পশ্চিম জার্মানির ৭৫ মিনিটের এই ফিল্মটির সহ-লেখক এবং ডিরেক্টর হচ্ছেন 'জর্জ বুটগেরিয়েট' যেখানে অভিনয়শিল্পীরা হচ্ছেন- ডাক্টারি লরেন্জ,বিয়াট্রিস ম্যানোস্কি,ফ্রান্জ এবং হারাল্ড ল্যান্ডট।
ফিল্মটি মূলত কোনো ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য বানানো হয় নি,কোনো প্রকার ব্যয়বহুল স্পেশাল ইফেক্টও ব্যবহৃত হয় নি। এটি একটি 'কাল্ট ফিল্ম'। 'কাল্ট ফিল্ম' হচ্ছে সেসব ফিল্ম যেগুলো প্রচলিত ফিল্মসমূহের বিপরীতে তৈরি,সেন্সরবোর্ড কিংবা দর্শক-প্রদর্শনের কোনোরূপ বিধিনিষেধ তেমন মানে না। একটি সাক্ষাৎকারে 'জর্জ' বলেছিলেন,নেক্রোম্যান্টিক শুধু একটি ছবিই যার উদ্দেশ্যে জার্মানির ফিল্ম রেটিং সিস্টেমকে ভেঙে দেয়া এবং যতটা সম্ভব দর্শকদের হতবাক করে দেয়া।
১৯৮৪ সাল থেকে পশ্চিম জার্মানে যত হরর ছবি তৈরি হয়েছিলো সেগুলোর প্রতিটির উপরই সেন্সরবোর্ডের কাঁচি চলেছে,৩২ টি ফিল্ম ব্যানও করা হয়েছিলো। "নেক্রোম্যান্টিক"-ই একমাত্র ফিল্ম যা সেন্সরশিপ স্ট্যান্ডার্ডের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে এবং সেন্সরবোর্ডে রিভিউ পেশ ব্যতীতই বাজারজাত করা হয়েছে।
ফিল্মটি বহু দেশে এখন পর্যন্ত ব্যান করা অবস্থায় আছে; যেমন-আইসল্যান্ড,নরওয়ে,মালয়েশিয়া,সিঙ্গাপুর,কানাডা,অস্ট্রেলিয়া,ফিনল্যান্ড,নিউজিল্যান্ড ইত্যাদি। বহু বছর পর ২০১৪ সালে "ব্রিটিশ বোর্ড অব ফিল্ম ক্লাসিফিকেশন" ছবিটি আনকাট অবস্থায় এ্যাডাল্ট ক্যাটাগরিতে সার্টিফিকেট প্রদান করে।
একটা মজার ব্যাপার আছে ফিল্মটির ক্ষেত্রে। তা হচ্ছে,দুনিয়াজুড়ে হাতেগোনা কয়েকটি ফিল্মের মধ্যে এটিই উল্লেখযোগ্য ফিল্ম যেখানে ব্যয়বহুল ইফেক্টস এর বদলে সত্যিকারের জিনিস দেখানো হয়েছে। যেমন প্রাণীদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ,রবার্টের দেখা খরগোশ হত্যা ইত্যাদি। সাধারণত,ফিল্ম তৈরির সময় কোনরূপ প্রাণী হত্যা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। তবে ইলিউশনের কারসাজিও দারুণ ছিলো। শেষ মুহূর্তে রবার্টের নিজেকে হত্যার দৃশ্যটি এতটাই বাস্তব হয়েছিলো যে,তৎকালীন দর্শকেরা সন্দেহে ভুগেছিলো,রবার্ট সত্যি সত্যিই নিজেকে হত্যা করে ফেলেছে কিনা..!!
উল্লেখযোগ্য বিষয়,"নেক্রোম্যান্টিক" পৃথিবীর সবচেয়ে বিতর্কিত এবং ব্যানড করা ফিল্ম যার কোনো রিমেক কিংবা রি-বুট হয়নি,এমনকি অন্য কেউ এর নতুন ভার্সন বের করার কল্পনাও করেনি। 'মুভি পাইলট' এর রিভিউ মতে-
"নেক্রোম্যান্টিক পৃথিবীর সবচেয়ে ইউনিক মুভিগুলোর একটা যদি না ডিরেক্টর জর্জের নেক্রোম্যান্টিক-২ এর কথা উল্লেখ করা হয়।"
এ্যাডাল্ট ফিল্ম বিধায় আই.এম.ডি.বি রেটিং ৫.১/১০, রোটেন টমেটোস ৫০% এবং ফিল্ম ওয়েব দিয়েছে ৪.৬/১০
NEKRomantik-2 (1991)
ফিল্মটি শুরু হয় ঠিক সেখান থেকেই যেখানে "নেক্রোম্যান্টিক-১" শেষ হয়েছিলো।
'রবার্টে'র মৃত্যুর খবর 'মনিকা' নামের এক তরুণী নার্স জানতে পারে যে কিনা নিজেও নেক্রোফিলিয়ায় আক্রান্ত। অতঃপর,রবার্টের কফিন থেকে তাকে অর্ধ-পঁচাগলা অবস্থায় চুরি করে বাড়ি নিয়ে আসে এবং তার সাথে নিয়মিত সময় কাটাতে থাকে। একসময় মনিকা রবার্টের মৃতদেহের প্রতিটা অঙ্গ বিচ্ছিন্ন করে ফেলে,সেগুলো সযত্নে প্যাক করে ফ্রিজে সংরক্ষণ করে। এদিকে মনিকার প্রেম হয় 'মার্ক' নামের সুদর্শন এক যুবকের সাথে যে কিনা পর্ণোগ্রাফিতে শব্দপ্রদানের চাকরি করতো। মার্ক মনিকার রোগ সম্পর্কে না জানলেও উদ্ভট আচরণ সর্বদাই খেয়াল করতো। কিন্তু,বেশ ভালোবাসে বিধায় কখনো তাকে ছেড়ে যেতে চায়নি। এদিকে মার্কের সাথে মনিকা সর্বদা হাসিখুশি থাকলেও ভয়ানক মানসিক ব্যাধি সবসময়ই মনিকা-কে তাড়া করে বেড়াতো। তাই একরাতে মার্কের সাথে যৌনতা স্থাপনকালীন সময়ে মনিকা তাকে কৌশলে হত্যা করে,মাথা কেটে ফেলে এবং সে স্থানে রবার্টের মাথা বসিয়ে সঙ্গম করে।
আনকাট অবস্থায় ১ঘন্টা ৫১মিনিটের ছবিটি পরিচালনা করেছেন আগের পরিচালক-ই,'জর্জ বুটগেরিয়েট' এবং অভিনয়ে ছিলেন- মনিকা,মার্ক রিডার,ক্যারোলা এবং অস্ট্রিড।
ছবিটি ছিলো জর্জের "নেক্রোম্যান্টিক" ১৯৮৭ সালের সিক্যুয়েল,যার জন্য পুরো দেশের অথোরিটি তৎপর ছিলো। জার্মানির মিউনিখে রিলিজের ১২ দিন পরপরই ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল কতৃপক্ষ ফিল্মটি বাজেয়াপ্ত করে যা কিনা নাৎসি বাহিনীর শাসনকালে এর আগে কখনও ঘটেনি। ছবিটির শেষ দৃশ্য জার্মান কতৃপক্ষের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে দেয়,ফলস্বরূপ ফিল্মটি প্রিমিয়ারের দিনই প্রিমিয়ারকারী সিনেমা হলে এ্যালার্ট জারি হয় এবং বেশ ক'বছরের জন্য ফিল্মটি ব্যান করা হয়।
১৯৯১ সালের জুন মাসে পরিচালক জর্জ-কে পুলিশী জিজ্ঞাসাবাদের সম্মুখীন হতে হয় এবং জার্মান সরকার অস্বাভাবিক সংঘাতপূর্ণ দৃশ্যের জন্য ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত দেশের প্রতিটি অন্ঞ্চল থেকে ফিল্মটির সকল ক্যাসেট,এমনকি নেগেটিভ পর্যন্ত উদ্ধার করে বাজেয়াপ্ত করে। অতঃপর,২০১৫ এর ফেব্রুয়ারিতে কাল্ট ফিল্মটি কাট এবং আনকাট দু'ফরম্যাটেই লিমিটেড এডিশন নিয়ে বাজারে ছাড়া হয়।
আই.এম.ডি.বি রেটিং ৫.৪/১০ এবং ফিল্মওয়েব প্রদান করে ৪.৬/১০
সে যা-ই হোক,কোনোরূপ কাহিনী না থাকলেও দু'টো ফিল্মেরই দারুণ সাউন্ডট্র্যাক,একদম ভিন্নধর্মী কনসেপ্ট,বাস্তবময় অভিনয় ৬০ কিংবা ৭০ এর দশকে অভাবনীয় পরিবর্তন আনে ইন্ড্রাষ্ট্রিতে। ক্রিটিক্সদের মতে,জর্জ বুটগেরিয়েট-ই একমাত্র পরিচালক যে কিনা নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন বিনোদনের মাধ্যমে মানবজীবনের অন্ধকার দিকগুলোকে তুলে ধরতে।
সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে,দর্শক,বিনোদনজগৎ এমনকি জার্মান সরকারকেও নাড়িয়ে দেয়ার জন্য ফিল্মটি যথেষ্ঠ ছিলো। চাইলে দেখে ফেলা যেতে পারে। তবে,সতর্কবার্তা হচ্ছে-
"দুর্বল চিত্তের লোকদের জন্য ফিল্মটি একদমই উপযুক্ত নয়।"