দারুণ তিনটি টিনেজ মুভি

কৈশোরেতে প্রেমে না পড়লে বুড়ো বয়সে আপসোস করতে হয়। বয়ঃসন্ধির নতুন জগৎ,নতুন অনুভূতি,ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো পরবর্তীতে দারুণ স্মৃতি হয়ে আজীবন রয়ে যায়।

আর সে স্মৃতিগুলো যদি কয়েকটি ছবির মাধ্যমে রোমন্থন করা যায়,তাহলে তারচেয়ে দুর্দান্ত আর কিছুই হতে পারে না। বেশ তো,রোমন্থন করার মত তিনটি মুভি এবেলা তাহলে দেখে ফেলা যাক।


ওপেন টি বায়োস্কোপ (২০১৫)

মারামারি করে স্কুল থেকে বহিষ্কার হয়ে যাওয়া ফোয়ারা মায়ের সাথে নর্থ কলকাতায় তাদের আগের বাড়িটি তে থাকতে শুরু করে। বয়ঃসন্ধির দুরন্ত কিছু সময়,মারমুখো কান্ডকারখানা আর পাড়ার সুন্দরী বালিকার প্রেমে পড়ার উপর এগোতে থাকে কাহিনী। সেই কাহিনীকে ঘিরে থাকে ফুটবলের উন্মাদনা,পুরোনো কিছু স্মৃতি,গল্পের নতুন কিছু মোড়।

প্লটটি ৯০'র দশকের শহুরে জীবনব্যবস্থার উপর নির্মিত। এখনকার মত তখন মুঠোফোন,কম্পিউটার কিংবা ইন্টারনেট কিছুই ছিলো না। ছিলো পাড়া জুড়ে কিশোরদের ছোটাছুটি,একরাশ অনুভূতি আর দারুণ সব ঘটনার ঘনঘটা। ৮০ বা ৯০ এর দশকে জন্ম নেয়া মানুষদের স্মৃতিচারণের জন্য একদম উপযুক্ত ছবিটি।

১৩৫ মিনিটের কমেডি-ড্রামা ফিল্মটি কলকাতায় তৈরি যার লেখক ও পরিচালক চন্দ্রবিন্দু ব্যান্ডের ভোকালিস্ট "অনিন্দ্য চ্যাটার্জী।"

ফোয়ারা চরিত্রে অভিনয় করেছে রিধি সেন,কিশোরী নায়িকা চরিত্রে সুরঙ্গনা ব্যানার্জি। তাছাড়া পার্শ্ব চরিত্রে ছিলেন বাঘা বাঘা অভিনয়শিল্পীরা- রজতভ দত্ত,পরাণ বন্দোপাধ্যায়,কৌশিক সেন,সোহিনী সরকার,সুদিপ্তা এবং রিত্বিক চক্রবর্তী।

আই.এম.ডি.বি রেটিং ৭.৬/১০ যেখানে টাইমস অব ইন্ডিয়া দিয়েছে ৩.৫/৫


লোডশেডিং (২০১৫)

৯০'র দশকে কলকাতায় লোডশেডিং যখন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার,ঠিক তখনই বেড়ে ওঠা দুই কিশোর কিশোরীর প্রেমের গল্পগুলো নিয়ে তৈরি হতে থাকে ছবির কাহিনী।

কিশোর প্রেমিক লোডশেডিংয়ের সময় মোমের আলোয় আলোছায়ার খেলা দেখাতো প্রেমিকাকে,সেখান থেকে ঘটে যেতে থাকে দারুণ অনুভূতির ব্যাপারগুলো। তবে তার পাশাপাশি প্রেমিকের চোখের সমস্যা গুরুতর হতে হতে একসময় অন্ধত্বে পরিণত হয়। এদিকে প্রেমিকাকেও একসময় পাড়া ছাড়তে হয়,স্মৃতি হিসেবে কিশোরের হাতে থাকে প্রেমিকার কতগুলো ভয়েস রেকর্ডিং ক্যাসেট। তারপর? দেখা যাক।

১১০ মিনিটের রোমান্টিক-ড্রামা মুভিটি পরিচালনা করেছেন "সৌকর্য ঘোষাল।" অভিনয়শিল্পী- রিধি সেন,মেঘলা দাসগুপ্ত,বিদিপ্তা চক্রবর্তী,অপরাজিতা ঘোষ,অনিমেষ ভাদুরি এবং আরো অনেকে।

আই.এম.ডি.বি রেটিং ৮.৩/১০


ফড়িং (২০১৩)

নর্থ বেঙ্গলে বেড়ে ওঠা এক কিশোরের নাম ফড়িং যার মন কিনা সর্বদা ফ্যান্টাসিতে পরিপূর্ণ,বেয়াড়া স্বভাব যাকে দিতে চাচ্ছে অবাধ স্বাধীনতা। কিন্তু দারিদ্র্যের কষাঘাত,বাবার শারীরিক অত্যাচার আর পড়াশোনায় বাজে ফলাফল জীবনটাকে যখন কঠিন করে তুলেছে ঠিক তখনই তার সাথে ঘনিষ্ঠতা হয় ইতিহাসের সুন্দরী শিক্ষিকা দোয়েল মিত্রের সাথে।

ফড়িংয়ের সৃজনশীলতার দিকে চোখ পড়ে শিক্ষিকার,পড়াশোনার উন্নতির জন্য নিজেই প্রাইভেট পড়ান ফড়িংকে। এদিকে বয়ঃসন্ধির উত্তেজনা উথলে ওঠে শিক্ষিকার নগ্ন পা দেখে,হস্তমৈথুন হয় তার আন্ডারওয়্যার শুঁকে। অনাবিল আনন্দে তার স্বর্গ সরগরম হয়ে ওঠে। পাশাপাশি হারিয়ে যাওয়া চিন্তাভাবনাগুলো ভাগাভাগি হতে থাকে একমাত্র বন্ধু লাট্টুর সাথে।

কিন্তু বিস্ফোরক দ্রব্য চোরাচালানে জড়িত থাকায় ধরা পড়ে দোয়েল মিত্র। জেলে যেতে হয় তাকে। ফড়িং-ও গ্রাম ছেড়ে পালায়,চলতে থাকে ঘটনাপ্রবাহ। শেষ পর্যন্ত?

১২৭ মিনিটের ড্রামা ফিল্মটি পরিচালনা করেছেন "ইন্দ্রনীল রায় চৌধুরী।" অভিনয়শিল্পী- আকাশ (ফড়িং), লাট্টু (সৌরভ), সোহিনী সরকার (দোয়েল মিত্র)। তাছাড়া পার্শ্বচরিত্রে ছিলেন রিত্বিক চক্রবর্তী।

আই.এম.ডি.বি রেটিং ৭.৬/১০

ছবিটি সেবছরই জিতে নেয় 'প্রাসাদ ল্যাবস পোস্ট প্রোডাকশন' আর সাংঘাই এ 'ভিনসেন্ট প্রাইজ' এর মত এ্যাওয়ার্ড গুলো।

টালিউড আর্টফিল্মগুলো বেশ ভালো হলেও আন্তর্জাতিক মহলে তত দূর যায় না বিধায় ক্রিটিক্স রিভিউ কিংবা আই.এম.ডি.বি রেটিং যথাযথভাবে হয় না। কখনো কখনো সঠিক মাত্রার চেয়ে অত্যধিক কিংবা অতি কম হয়ে থাকে। তাই রেটিংয়ের দিকে দৃষ্টিপাত না করে একবার বসেই দেখা যাক না? উপভোগ করাটাই তো আসল ব্যাপার..!!

No comments:

Post a Comment

পোস্টটির দর্শক সংখ্যা-

ফিচার পোস্ট

দারুণ তিনটি টিনেজ মুভি

কৈশোরেতে প্রেমে না পড়লে বুড়ো বয়সে আপসোস করতে হয়। বয়ঃসন্ধির নতুন জগৎ,নতুন অনুভূতি,ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো পরবর্তীতে দারুণ স্মৃতি হয়ে আজীবন রয়ে যায়...

সর্বাধিক পঠিত