রাত ১২টায় চা খেতে বেড়িয়েছিলাম। হঠাৎ ইচ্ছে হলো,একটা সিগারেট নেয়া যাক;বহুমাস টানা হয়না। ফুঁকতে ফুঁকতে সামনে এগোচ্ছি,পিছন থেকে স্বর ভেসে এলো,
- টানতে না পারলে শুধু শুধু কিনেন ক্যান?
তাকাতেই দেখি একজন রিক্সাওয়ালা এগিয়ে আসছেন। বয়স চল্লিশের কাছে। হাত থেকে সিগারেটটা নিয়ে আগুনের দিকটা অদ্ভুত কৌশলে মুখে পুড়ে দিব্যি শেষ করে ফেললেন।
কিছুটা হতচকিত আমরা,অতঃপর গল্প শুরু।
গল্পে গল্পে তিনজনই গল্পের ভীড়ে হারিয়ে গেলাম। আমরা দুজন রিক্সার সিটে আর রিক্সাওয়ালা রিক্সার হ্যান্ডেলে বসে আছেন। গল্প চলছে। তার কৈশরে বিয়ের কাহিনী,বাড়ি থেকে সমুদ্রে যাওয়া,জাহাজ ভ্রমণ,চরান্ঞ্চলের খুনোখুনি,অবৈধ প্রেম আরো কত কি। তার এই পুরো জীবনটা নিয়ে তিনি বড়ই সুখী।
পুলিশের গাড়ি এসে টহল দিয়ে যায়,কিছু দূরেই আনসাররা বসে বসে আমাদের আড্ডা দেখছে। বেশ হচ্ছিলো। দুইঘন্টা গল্পের পর উনার পান খাওয়ার বাতিক উঠলো। আমাদের জোর করে রিক্সায় তুলেই উনি পানের উদ্দেশ্যে বের হলেন।
হঠাৎই নেমে এলো ঝুম বৃষ্টি।
একজন রিক্সাওয়ালা দুজন অচেনা ছেলেকে তার রিক্সায় নিয়ে মনের সুখে ঘুরে বেড়াচ্ছেন শহরের এমাথা থেকে ওমাথা। রিক্সার হুড খোলা,বৃষ্টির ফোটাগুলো যেনো এক একটা বরফের কনা।
আমি সুখী রাজকুমারের গল্প পড়েছি,কিন্তু একজন সুখী রিক্সাওয়ালাকে নিজের চোখে দেখেছি যে কি না তিনঘন্টা প্যাসেঞ্জার বহন বাদ দিয়ে দুজন ছেলেকে জীবনের গল্প বলেছেন।
গল্পের ওপারে এই মানুষটি আমাদের এতটাই পছন্দ করেছেন যে বিনে পয়সায় শহর ঘুরিয়ে বাসায়ও পৌঁছে দিয়ে গেলেন। পথিমধ্যে নিজে পান খাওয়ার সময় আমাদের চাও খাওয়ালেন।
প্রতিদিন নেশার মত এই নৈশভ্রমণ আমাদের যা দিচ্ছে তা হয়তো অন্যরা সারাজীবন খুঁজেও পাবেনা। কেননা,গল্পরা বোধহয় ঘরে থাকেনা। মহাসড়ক কিংবা গলির পথের ইটেয় ইটেয় ছড়িয়ে থাকে। একজন ২২বছরের আমি'র কাছে এর চেয়ে ভালো গল্প বোধহয় হয় না।
ঠিক করেছি,একদিন আমার উত্তরাধিকারীদের গল্প বলবো।
শতমাইল হাঁটার গল্প।
No comments:
Post a Comment