বয়ঃসন্ধির ডায়েরী


আজকের মত সেদিনও বৃষ্টি হচ্ছিলো। ঝিরঝিরে নয়,ঝুম বৃষ্টি। নিতান্ত সৌজন্যবোধের কারণেই দেখা করতে গিয়েছিলাম।

নিউমার্কেট রাস্তার মাঝ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি,আশেপাশের মানুষগুলো সব হাঁ হয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। কোনো মহানায়কের হেঁটে যাওয়ার দৃশ্য নয় সেটা, কৈশোর পেরোনো সদ্য এক তরুণ ভারী বর্ষণে জুবুথুবু হয়ে হেঁটে চলেছে,ফিটফাট ড্রেসে,বিরক্ত ভঙ্গিতে।

রাস্তায় কোনো বাহন চলছেনা,এতটাই বৃষ্টি..!! আশেপাশের ফুটপাতে অগনিত মানুষ দাঁড়িয়ে আছে বৃষ্টি থেকে বাঁচতে। খানিকটা অস্বস্তি লাগছে,পাছে বোধহয় আমাকে উন্মাদ ভাবছে। কেউ কখনো ফিটফাট হয়ে বৃষ্টিতে ভেজে না।

নিউমার্কেটে কোন গেইট দিয়ে প্রবেশ করেছিলাম,খেয়াল নেই। তবে সে গেইটে তত মানুষ আশ্রয় নেয় নি। গেইটের নিচে বিরক্ত মুখে দাঁড়িয়ে আছি,কাকভেজা হয়ে গেছি। ফোন,মানিব্যাগ সবকিছুতেই পানি ঢুকে গেছে। রুমালটা তাড়াহুড়োয় ফেলে এসেছি। রুমাল আর ঘড়ি ছাড়া কখনো বেড়িয়েছি বলে মনে পড়ছেনা। আজই এমন হলো..!!

হঠাৎ একখানা রুমাল বাড়িয়ে ধরলো কেউ। অতি ধবধবে ফর্সা একটা হাত সে রুমালটা ধরে আছে। হকচকিয়ে চেহারার দিকে তাকালাম,একজন অপ্সরী দাঁড়িয়ে আছে আমার পাশে। চিনতে পারলাম তাকে। একেই সৌজন্যবোধটুকু দেখাতে এসেছি আমি। স্বেচ্ছায় নয়,অনিচ্ছায়।

আশেপাশের লোকজন তাকিয়ে আছে আমার দিকে। তাদের চোখে অদ্ভুত দৃষ্টি। হয়তো এই রূপসীর পাশে আমায় মানাচ্ছেনা।

বিব্রতকর অবস্থায় বেশ খানিকটা সময় পেড়িয়ে গেলো,তখনও রুমালটা আমার সামনেই ধরে রাখা হয়েছে।
- আমি আপনাকে বৃষ্টিতে ভিজে আসতে বলি নাই,ভিজে আসছেন কেনো?

- তুমি ই তো বললা,সময় নাই। ফেরার বাস ধরতে হবে। এতদূর থেকে আসছো,সৌজন্যবোধেরও তো একটা ব্যাপার আছে।

- সৌজন্যবোধ না,এটা কর্তব্য। সারা দুনিয়াতে ছেলেদেরই যেতে হয় মেয়েদের কাছে দেখা করতে,আপনার সেই ক্ষমতাও নাই।

- মেয়েদের কাছে কাছে গিয়ে দেখা করার অভ্যাস নাই আমার। আমি পারবোও না সেটা।

- তা পারবেন কেনো? সাহস থাকা লাগে তো সেসব করতে। বৃষ্টিতে ভেজানোর জন্য দুঃখিত। রুমালটা ধরেন,মাথা মোছেন।

- আমি অন্যদের রুমাল ব্যবহার করিনা।

- আমি নাক মুছিনা এই রুমাল দিয়ে,ঘেমে গেলে শুধু মুখ মুছি। ভয়ের কিছু নাই,ধরেন। মাথা মোছেন,ঠান্ডা লেগে যাবে।

রুমালটা হাতে নিলাম। ভারী মিস্টি একটা গন্ধ। খানিকটা মোহাচ্ছন্ন হয়ে পড়লাম। হয়তো দ্বিতীয়বার তার গায়ের গন্ধ পেলাম..!!
- রুমালটা ফেরত দিন দয়া করে।

- মানে? নোংরা করে ফেলেছিতো মাথা মুছে। আমি চুলে জেল দেই। রুমাল তো আঠা আঠা হয়ে গেছে।

- কখনো তো কিছু দেন নাই,নোংরা হওয়া রুমালটাই ফেরত দিন দয়া করে? অন্তত আমার কাছে একটা স্মৃতি তো থাকুক..!!

আমি ভীষণ ভয় পাচ্ছি। প্রচন্ড সুন্দরীদের বরাবরই ভয় আমার। ছুটে পালিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে,কিন্তু পা নড়ছে না। হয়তো মোহনীয় সৌন্দর্যের ফাঁদে পড়েছি।

- আমার খিদে পেয়েছে। রেস্টুরেন্টে চলেন।

- আমার কাছে টাকা নেই অত। রিক্সা ভাড়া ছিলো,শুধু সেটাই আছে।

- সেটা আপনার ভাবতে হবেনা। কখনো তো খাওয়ানও নাই,কিপ্টা কোথাকার। আসেন তো।

আমার হাত ধরে টান দিলো সে অপ্সরী,আমি প্রচন্ড বিব্রতকর অবস্থায় হাঁটছি তার পাশে। হাত ছাড়াতেও পারছিনা। হয় অতি ভয়ে,নয়তো আমিও চাইছিনা সে আমার হাত ছাড়ুক।
.
.
ঘন্টাখানেকের মত সময় কেটে গেলো। আমি এখনও সহজ হতে পারছি না। বসেছিলাম রেস্টুরেন্টের দোতলায়। ঝুম বৃষ্টির কারণে একজোড়া দম্পতি ছাড়া আর কেউ নেই।

আবেগপূর্ণ সে দম্পতি আমাদের প্রেমিক-প্রেমিকা ভেবে নিশ্চিন্তে নিজেদের চুমুর রাজ্যে ডুবিয়ে রেখেছেন। অপ্সরী সেদিকে তাকাচ্ছে আর আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে।

হঠাৎ নিজের হাতে আরেকটা মোলায়েম হাতের স্পর্শ টের পেলাম। আমার হাতে বেশ রকমের টাকা গুঁজে দিলো সে।
- বিল টা দিয়ে দেবেন। আর একটা কথা,আশায় থাকবো। আমি যদি ভাগ্যবতী হই,হয়তো কোনোদিন কেয়ার পাবো।

সাথে সাথেই এক মিষ্টি চুম্বন অনুভব করলাম। সেকেন্ডের ক্ষণস্থায়ী সে চুম্বন দিয়েই অপ্সরী দৌঁড়ে নিচে নেমে গেলো। আমি মোহময়ীর গন্ধে মোহাচ্ছন্ন হয়ে রয়েছি।
.
.
ঘন্টাখানেক পরে বেরিয়ে এলাম সেখান থেকে। বৃষ্টি থেমে গেছে। রাস্তা সেই চিরচেনা ব্যস্ততায় ফিরে গেছে।
সেদিনের মত আজও ঘোরলাগা চেতনায় হাঁটছি আমি,হয়তো সেটাই প্রথম ছিলো না। ছেলেদের চরিত্র মেঘের মত বদলায়।

সে মিষ্টি গন্ধ টা আজও খুঁজি। নেশার জন্য নয়,আকুতির জন্য। আর কখনো দেখা হয় নি আমাদের,হবেও না। দুই পৃথিবীতে আছি আমরা।

যোগাযোগের কোনো চেষ্টা করবো না। যদি কখনো সম্ভব হয়,তোমার ব্যবহার করা একটা রুমাল পাঠিয়ে দিয়ো ওপার হতে। আমি যত্ন করে রেখে দেবো।

No comments:

Post a Comment

পোস্টটির দর্শক সংখ্যা-

ফিচার পোস্ট

দারুণ তিনটি টিনেজ মুভি

কৈশোরেতে প্রেমে না পড়লে বুড়ো বয়সে আপসোস করতে হয়। বয়ঃসন্ধির নতুন জগৎ,নতুন অনুভূতি,ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো পরবর্তীতে দারুণ স্মৃতি হয়ে আজীবন রয়ে যায়...

সর্বাধিক পঠিত