স্বপ্নের কালকথা


আমি ঘুমের মধ্যে মাঝে মাঝেই হঠাৎ চোখ মেলি। নাহ্,নিশি নয়। দিনে-দুপুরে কাউকে নিশিতে পায়না।

গত সাত বছর ধরে খুঁজছি কিছু। কেউ কেউ গল্পের মাঝটা জানে। আমিই ভুলে গেছি সর্বাংশের শুরুটা।

আজ হুমায়ূন আহমেদ স্যার এলেন। সাথে একজন অতিথি ছিলো। অতিথিটি আসলে তার না আমার,আমি জানিনা। মাসখানেক তার কোনো বই পড়িনি। সুতরাং,'প্রভাবয়িত স্বপ্ন' ঘটানোর সুযোগ নেই।

এসেই টেবিলের সামনে রাখা চেয়ার দুটোতে দুজন বসলেন। ঘরটা আমার কাছে অপরিচিত। স্কচ ট্যাপ আর কি একটা যেন চাইলেন। স্যারের ডায়েরি ছিড়ে গিয়েছে বোধহয়। আমি পাশের রুমে কি একটার জন্য আসতেই অতিথিকে ফিসফিসিয়ে বলতে শুনলাম,
- মুয়িদুল ছেলেটাকে আপনার কেমন লাগে?

- ব্যক্তিগতভাবে ভালোই লাগে,কিন্তু কখনো প্রকাশ করিনি।

আমি সামনে যেতেই আমাকে বললেন,
- "বিথিরোড" টা চেনো?

আমি নিঃশব্দে মাথা নাড়তেই বললেন,
- ওখানে লাশ ফেলা হয়। যদি চাও,যেতে পারো। সাইকেল নিয়ে যেও। যদিও দিনে লাশ দেখতে পাওয়া যায় না। রোড টা বেশ সুন্দর। ডায়েরিতে তোমার নাম্বার টা লেখো তো..

আমি আমার ফোন নাম্বার লিখতে গিয়ে কলম পাচ্ছিনা। স্যার একটা কলম দিলেন। সেটাতেও কালি আসছে না। যাও আসছে,আমি ডিজিট মনে করতে পারছি না। আমার সংখ্যাভীতি আছে। ২০০৯-১০ এর দিকে পলিনড্রেমিক নাম্বার নিয়ে একটু বেশি ঘাটাঘাটিতে আমার এই সমস্যার সৃষ্টি।

স্যার আমার দিকে তাকিয়ে হাসলেন। ওনার ফোন নম্বর আমাকে দিতে গিয়ে খেয়াল করলেন,ওনারও ডিজিট মনে পড়ছে না। চেয়ার ছেড়ে উঠতে উঠতে বললেন,
- রোডটার কথা মনে রেখো। স্বপ্ন তো,স্মৃতি না থাকার সম্ভাবনা বেশি।

বলতে বলতে হাওয়ায় মিলিয়ে গেলেন। আমি চোখের পাতা হঠাৎ খুলে দেখি,চোখের সামনে একটা রৌদ্রজ্জল সড়ক খা খা করছে। কিন্তু,তাতে কোনো লাশ নেই।

উদ্ভট স্বপ্ন দেখা সাধারণ মানুষের কর্তব্যে পড়ে। মস্তিস্ক আমাদের নিয়ে সর্বদা খেলে। আমরা বাস্তববাদী সাজার জন্য স্বপ্নের জগৎটাকে একপাশে ঠেলে রেখে দেই।

মনে আছে,২০১০ এর দিকে "টানিন" নামের এক জায়গায় গিয়ে ভরদুপুরে বসে থাকতাম। সেখানে খুন করে লাশ ফেলে রাখা হতো। এলাকাটা মরুময় আর ঘাসময় ছিলো। ডাকিনীবিদ্যা নিয়ে ঘাটাঘাটিতে ছিলাম আর টিনেজ বলে ব্যাপারটা বুঝিনি তখন। একদিন সে গল্পগুলো জমাবো নে।

২০০৮ এর দিকে সম্ভবত আমি স্বপ্ন দেখার সত্যিকার শক্তি টের পাই। তারপর থেকেই দৌড় শুরু। "কোয়ান্টাম পদার্থবিদ্যা" আর "কোয়ান্টাম মেথড" এর সংমিশ্রণে ঢুকি। পরবর্তীতে এক সংঘের মাধ্যমে পরিচয় হয় "প্যারাফিজিক্স" এর সাথে।

২০০৯ এর দিকে আমি "কল্পবাস্তব জগতে" পা রাখি। একা একাই। সাথে আরেকটা জগতে। ডাকিনীবিদ্যা।
প্রথমদিকে ক্ষমতার নেশায় শুরু করলেও পরে ফেরত আসা হয়। কিন্তু ঘাটাঘাটি চলতেই থাকে। মিশরীয় মিথে বিশ্বাসী আমি;যোগাযোগ হয় ইন্টারনেটে কিছু প্রতিষ্ঠানের সাথে। পরিচয় হয় ইন্ডিয়ান কিছু তান্ত্রিকের সাথে।

আমেরিকান কয়েকজন ভলান্টিয়ার্স ইন্টারনেটে আমাকে পরিচয় করায় তৃতীয় শক্তির জগতে।গবলিন,পাক,ঔগার,ইনকিউবাস,পিক্সি,গোগ্রান,ব্যানসী আরও শতও কতও নাম..!! পরিচিত তান্ত্রিকেরা আমায় শিখিয়েছিলো কিছু যুক্তির চিত্র যাতে পরাশক্তি ভর করতে পারে। বছরখানেক আগে চিত্রগুলো কোনো এক কারণে পুড়িয়ে ফেলতে হয়। আমার নব্বই শতাংশ লিখিত জ্ঞান পুড়িয়ে ফেলতে হয় আমাকে। এখন কয়েক টুকরো কাগজ আছে শুধু..!!

আমার সেলেনা আন্টির কথা বেশ মনে পড়ে যিনি আমায় বলেছিলেন,তিনি তার তিনমাসের ছেলে বাচ্চাটাকে তার পালা অজগর সাপকে খেতে দিবেন। "মিডিয়াম থ্রি" মানে "আত্মাভরবাদে" নিযুক্ত ছিলেন উনি। সেই টিনএজ বয়সে ইন্টারনেট সহজলভ্য ছিলো না। এক বছরের মাথায় সকল সংঘের সাথে যোগাযোগ হারাই আমি।

ক'দিন আগে ডেঙ্গুতে ছিলাম। দিনরাত শুধু ঘুম। স্বপ্নে দেখলাম,একটা তিনমাসের বাচ্চাকে অজগরের মুখের সামনে ছুড়ে ফেললো একদল ছেলে। দেয়ালের ওপারে বিশালদেহী এক মহিলা হাসছেন। সম্ভবত সেলেনা আন্টি।

মাঝের পাঁচ বছর শুধু ঘুরেছি আর পড়েছি। একসময় প্রিয়তমার খাতিরে একবছর নিষিদ্ধ করে রেখেছিলাম ঘাটাঘাটি। পরে দেখলাম,আমার জগৎ টা একদম আলাদা সব থেকে। আমি বের হলে পাপ হবে।
গুল মারা ভাবলেও মাঝে মাঝে আমি অবাক হয়ে যাই যে,না চাইতেই তৃতীয় শক্তি কোনভাবে আমার মধ্যে ঢুকে পড়েছিলো। ২০১৩ সালের দিকে কয়েকজন বান্ধবী বিষয়টা জানায় আমায়। টেলিপ্যাথি আর স্বপ্ন নিয়ন্ত্রণে তখন বিশ্বাসী হয় ওরা।

কোয়ান্টাম মেকানিক্স সবসময় আমায় সাপোর্ট দিয়েছিলো। সাথে ছিলো প্যারাফিজিক্স।

স্বপ্ন দেখা,যতটা জটিল ভাবা হয়,আমার কাছে তার থেকেও জটিল লাগে। ডাকিনীবিদ্যায় প্রবেশের আগে স্বপ্ন নিয়ন্ত্রণ নিয়েই ছিলাম। কয়েকটা শক্তি এখনও উল্টো আমায় নিয়ন্ত্রণ করে। এমনকি ক'দিন আগেও স্বপ্নের তৃতীয় শক্তিস্তরেও পৌঁছাতে পেরেছি নিজের অজান্তেই। "ক্যাথলাস" গল্পটা লেখার পরে।

আমার জীবনটা হাস্যকর। এমন এক জগতে ঢুকেছিলাম সাত বছর আগে,যার কোন ভিত্তি থাকলেও ভিত্তি নেই। ঐশ্বরিক শক্তি তার পাশে শয়তানিক শক্তি স্থান পেলেও আমি তৃতীয় কোনো শক্তিকে জানার জন্য দৌড়োচ্ছি। স্বপ্নের বিজ্ঞানভিত্তিক বিশ্লেষনের বাইরের যেসব শক্তিশালী বিশ্লেষণ আছে,সেসব না হয় আরেকদিন হবে।

আপাতত স্বপ্ন নয়,এমনকি কোনো ডাকিনীবিদ্যাও নয়; "মেজমেরিজম" নিয়ে কিছুটা পড়তে চাচ্ছি। পড়ায় মনযোগ আসছে না। বাইরে বোধহয় ঝড় শুরু হবে। গত সাত বছরের জ্ঞানগুলো দপদপ করে মাথায় জ্বলছে। এত বিষয় ঘাঁটা হয়েছে যে,মগজটাই ঘেঁটে গিয়েছে।

কে জানে,তৃতীয় শক্তি হয়তো পাশে বসেই আমায় দেখে হাসছে..!!

No comments:

Post a Comment

পোস্টটির দর্শক সংখ্যা-

ফিচার পোস্ট

দারুণ তিনটি টিনেজ মুভি

কৈশোরেতে প্রেমে না পড়লে বুড়ো বয়সে আপসোস করতে হয়। বয়ঃসন্ধির নতুন জগৎ,নতুন অনুভূতি,ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো পরবর্তীতে দারুণ স্মৃতি হয়ে আজীবন রয়ে যায়...

সর্বাধিক পঠিত