সিনেমা তৈরির উদ্দেশ্য যখন মানুষকে হতবাক করে দেয়া..!!

একজন ব্যক্তি যতবড় সিনেমাপ্রেমী-ই হোক না কেনো,কিছু কিছু সিনেমা আছে যা দেখতে হলে আসলেই প্রচন্ড পরিমাণে মানসিক জোর আর সহ্যশক্তি থাকা দরকার। এই আর্টিকেলে আছে সেরকমই একজোড়া ফিল্মের বর্ণনা,যাদের স্থান পৃথিবীর সবচেয়ে অসুস্থ মুভির কাতারে। 

বর্ণনা যাচ্ছেতাই-ভাবে পড়ে গেলেও ফিল্মজোড়া অন্তত যাচ্ছেতাই-ভাবে দেখা যাবে না। এ ধাঁচের বিনোদন আস্বাদনের দায়ভার দর্শকের নিজের উপর,অন্য কারো নয়। 

NEKRomantik (1987)
ফিল্মটি ড্রামা-হরর-এক্সপ্লয়টেশন ক্যাটাগরির হলেও একে পরবর্তীতে আরো কয়েকটি জেনারের অন্তর্ভুক্ত করা হয়; যেমন- স্প্ল্যাটার ফিল্ম,ব্ল্যাক কমেডি এবং সফ্টকোর পর্ণগ্রাফি। 


'রবার্ট' ও তার স্ত্রী 'বেট্টি' দুজনেই নেক্রোফিলিয়া'তে আক্রান্ত(নেক্রোফিলিয়া হচ্ছে মৃতদেহের প্রতি যৌনাকর্ষণ।) সৌভাগ্যবশত,'রবার্ট' এমন একটি চাকরিতেই নিয়োজিত থাকে যেখানে কাজ হচ্ছে দূর্ঘটনায় কবলিত মৃতদেহ সরানো,তা পরিষ্কার এবং মর্গে পৌঁছে দেয়া। মৃতদেহগুলো সাধারণত এমন অবস্থায় থাকে যেখানে সেগুলো পঁচে-গলে গিয়েছে নয়তো দেহের কোন অংশ পাওয়া যাচ্ছে না। রবার্ট প্রায়ই সেসব মৃতদেহ অথবা বিচ্ছিন্ন অঙ্গগুলো বাড়ি নিয়ে আসে তার এবং তার স্ত্রীর উপভোগের জন্য। কিন্তু,পরবর্তীতে  বিশেষ এক কারণে 'রবার্ট' তার চাকরি হারায়; স্ত্রী 'বেট্টি'ও তাকে ত্যাগ করে। দিনে দিনে রবার্টের অসুস্থ মানসিকতা চূড়ান্ত পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়ায়,ফলশ্রুতিতে সে যৌন উত্তেজনা মেটাতে নিজেকেই নিজে খুন করে।

পশ্চিম জার্মানির ৭৫ মিনিটের এই ফিল্মটির সহ-লেখক এবং ডিরেক্টর হচ্ছেন 'জর্জ বুটগেরিয়েট' যেখানে অভিনয়শিল্পীরা হচ্ছেন- ডাক্টারি লরেন্জ,বিয়াট্রিস ম্যানোস্কি,ফ্রান্জ এবং হারাল্ড ল্যান্ডট।

ফিল্মটি মূলত কোনো ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য বানানো হয় নি,কোনো প্রকার ব্যয়বহুল স্পেশাল ইফেক্টও ব্যবহৃত হয় নি। এটি একটি 'কাল্ট ফিল্ম'। 'কাল্ট ফিল্ম' হচ্ছে সেসব ফিল্ম যেগুলো প্রচলিত ফিল্মসমূহের বিপরীতে তৈরি,সেন্সরবোর্ড কিংবা দর্শক-প্রদর্শনের কোনোরূপ বিধিনিষেধ  তেমন মানে না। একটি সাক্ষাৎকারে 'জর্জ' বলেছিলেন,নেক্রোম্যান্টিক শুধু একটি ছবিই যার উদ্দেশ্যে জার্মানির ফিল্ম রেটিং সিস্টেমকে ভেঙে দেয়া এবং যতটা সম্ভব দর্শকদের হতবাক করে দেয়া। 

১৯৮৪ সাল থেকে পশ্চিম জার্মানে যত হরর ছবি তৈরি হয়েছিলো সেগুলোর প্রতিটির উপরই সেন্সরবোর্ডের কাঁচি চলেছে,৩২ টি  ফিল্ম  ব্যানও করা হয়েছিলো। "নেক্রোম্যান্টিক"-ই একমাত্র ফিল্ম যা সেন্সরশিপ স্ট্যান্ডার্ডের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে এবং সেন্সরবোর্ডে রিভিউ পেশ ব্যতীতই বাজারজাত করা হয়েছে। 

ফিল্মটি বহু দেশে এখন পর্যন্ত ব্যান করা অবস্থায় আছে; যেমন-আইসল্যান্ড,নরওয়ে,মালয়েশিয়া,সিঙ্গাপুর,কানাডা,অস্ট্রেলিয়া,ফিনল্যান্ড,নিউজিল্যান্ড ইত্যাদি। বহু বছর পর ২০১৪ সালে "ব্রিটিশ বোর্ড অব ফিল্ম ক্লাসিফিকেশন" ছবিটি আনকাট অবস্থায় এ্যাডাল্ট ক্যাটাগরিতে সার্টিফিকেট প্রদান করে।

একটা মজার ব্যাপার আছে ফিল্মটির ক্ষেত্রে। তা হচ্ছে,দুনিয়াজুড়ে হাতেগোনা কয়েকটি ফিল্মের মধ্যে এটিই উল্লেখযোগ্য ফিল্ম যেখানে ব্যয়বহুল ইফেক্টস এর বদলে সত্যিকারের জিনিস দেখানো হয়েছে। যেমন প্রাণীদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ,রবার্টের দেখা খরগোশ হত্যা ইত্যাদি। সাধারণত,ফিল্ম তৈরির সময় কোনরূপ প্রাণী হত্যা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। তবে ইলিউশনের কারসাজিও দারুণ ছিলো। শেষ মুহূর্তে রবার্টের নিজেকে হত্যার দৃশ্যটি এতটাই বাস্তব হয়েছিলো যে,তৎকালীন দর্শকেরা সন্দেহে ভুগেছিলো,রবার্ট সত্যি সত্যিই নিজেকে হত্যা করে ফেলেছে কিনা..!!

উল্লেখযোগ্য বিষয়,"নেক্রোম্যান্টিক" পৃথিবীর সবচেয়ে বিতর্কিত এবং ব্যানড করা ফিল্ম যার কোনো রিমেক কিংবা রি-বুট হয়নি,এমনকি অন্য কেউ এর নতুন ভার্সন বের করার কল্পনাও করেনি। 'মুভি পাইলট' এর রিভিউ মতে-
"নেক্রোম্যান্টিক পৃথিবীর সবচেয়ে ইউনিক মুভিগুলোর একটা যদি না ডিরেক্টর জর্জের নেক্রোম্যান্টিক-২ এর কথা উল্লেখ করা হয়।"

এ্যাডাল্ট ফিল্ম বিধায় আই.এম.ডি.বি রেটিং ৫.১/১০, রোটেন টমেটোস ৫০% এবং ফিল্ম ওয়েব দিয়েছে ৪.৬/১০


NEKRomantik-2 (1991)
ফিল্মটি শুরু হয় ঠিক সেখান থেকেই যেখানে "নেক্রোম্যান্টিক-১" শেষ হয়েছিলো।

'রবার্টে'র মৃত্যুর খবর 'মনিকা' নামের এক তরুণী নার্স জানতে পারে যে কিনা নিজেও নেক্রোফিলিয়ায় আক্রান্ত। অতঃপর,রবার্টের কফিন থেকে তাকে অর্ধ-পঁচাগলা অবস্থায় চুরি করে বাড়ি নিয়ে আসে এবং তার সাথে নিয়মিত সময় কাটাতে থাকে। একসময় মনিকা রবার্টের মৃতদেহের প্রতিটা অঙ্গ বিচ্ছিন্ন করে ফেলে,সেগুলো সযত্নে প্যাক করে ফ্রিজে সংরক্ষণ করে। এদিকে মনিকার প্রেম হয় 'মার্ক' নামের সুদর্শন এক যুবকের সাথে যে কিনা পর্ণোগ্রাফিতে শব্দপ্রদানের চাকরি করতো। মার্ক মনিকার রোগ সম্পর্কে না জানলেও উদ্ভট আচরণ সর্বদাই খেয়াল করতো। কিন্তু,বেশ ভালোবাসে বিধায় কখনো তাকে ছেড়ে যেতে চায়নি। এদিকে মার্কের সাথে মনিকা সর্বদা হাসিখুশি থাকলেও ভয়ানক মানসিক ব্যাধি সবসময়ই মনিকা-কে তাড়া করে বেড়াতো। তাই একরাতে মার্কের সাথে যৌনতা স্থাপনকালীন সময়ে মনিকা তাকে কৌশলে হত্যা করে,মাথা কেটে ফেলে এবং সে স্থানে রবার্টের মাথা বসিয়ে সঙ্গম করে।

আনকাট অবস্থায় ১ঘন্টা ৫১মিনিটের ছবিটি পরিচালনা করেছেন আগের পরিচালক-ই,'জর্জ বুটগেরিয়েট' এবং অভিনয়ে ছিলেন- মনিকা,মার্ক রিডার,ক্যারোলা এবং অস্ট্রিড।

ছবিটি ছিলো জর্জের "নেক্রোম্যান্টিক" ১৯৮৭ সালের সিক্যুয়েল,যার জন্য পুরো দেশের অথোরিটি তৎপর ছিলো। জার্মানির মিউনিখে রিলিজের ১২ দিন পরপরই ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল কতৃপক্ষ ফিল্মটি বাজেয়াপ্ত করে যা কিনা নাৎসি বাহিনীর শাসনকালে এর আগে কখনও ঘটেনি। ছবিটির শেষ দৃশ্য জার্মান কতৃপক্ষের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে দেয়,ফলস্বরূপ ফিল্মটি প্রিমিয়ারের দিনই প্রিমিয়ারকারী সিনেমা হলে এ্যালার্ট জারি হয় এবং বেশ ক'বছরের জন্য ফিল্মটি ব্যান করা হয়।

১৯৯১ সালের জুন মাসে পরিচালক জর্জ-কে পুলিশী জিজ্ঞাসাবাদের সম্মুখীন হতে হয় এবং জার্মান সরকার অস্বাভাবিক সংঘাতপূর্ণ দৃশ্যের জন্য ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত দেশের প্রতিটি অন্ঞ্চল থেকে ফিল্মটির সকল ক্যাসেট,এমনকি নেগেটিভ পর্যন্ত উদ্ধার করে বাজেয়াপ্ত করে। অতঃপর,২০১৫ এর ফেব্রুয়ারিতে কাল্ট ফিল্মটি কাট এবং আনকাট দু'ফরম্যাটেই লিমিটেড এডিশন নিয়ে বাজারে ছাড়া হয়।

আই.এম.ডি.বি রেটিং ৫.৪/১০ এবং ফিল্মওয়েব প্রদান করে ৪.৬/১০


সে যা-ই হোক,কোনোরূপ কাহিনী না থাকলেও দু'টো ফিল্মেরই দারুণ সাউন্ডট্র্যাক,একদম ভিন্নধর্মী কনসেপ্ট,বাস্তবময় অভিনয় ৬০ কিংবা ৭০ এর দশকে অভাবনীয় পরিবর্তন আনে ইন্ড্রাষ্ট্রিতে। ক্রিটিক্সদের মতে,জর্জ বুটগেরিয়েট-ই একমাত্র পরিচালক যে কিনা নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন বিনোদনের মাধ্যমে মানবজীবনের অন্ধকার দিকগুলোকে তুলে ধরতে। 

সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে,দর্শক,বিনোদনজগৎ এমনকি জার্মান সরকারকেও নাড়িয়ে দেয়ার জন্য ফিল্মটি যথেষ্ঠ ছিলো। চাইলে দেখে ফেলা যেতে পারে। তবে,সতর্কবার্তা হচ্ছে-
"দুর্বল চিত্তের লোকদের জন্য ফিল্মটি একদমই উপযুক্ত নয়।"


দারুণ তিনটি টিনেজ মুভি

কৈশোরেতে প্রেমে না পড়লে বুড়ো বয়সে আপসোস করতে হয়। বয়ঃসন্ধির নতুন জগৎ,নতুন অনুভূতি,ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো পরবর্তীতে দারুণ স্মৃতি হয়ে আজীবন রয়ে যায়।

আর সে স্মৃতিগুলো যদি কয়েকটি ছবির মাধ্যমে রোমন্থন করা যায়,তাহলে তারচেয়ে দুর্দান্ত আর কিছুই হতে পারে না। বেশ তো,রোমন্থন করার মত তিনটি মুভি এবেলা তাহলে দেখে ফেলা যাক।


ওপেন টি বায়োস্কোপ (২০১৫)

মারামারি করে স্কুল থেকে বহিষ্কার হয়ে যাওয়া ফোয়ারা মায়ের সাথে নর্থ কলকাতায় তাদের আগের বাড়িটি তে থাকতে শুরু করে। বয়ঃসন্ধির দুরন্ত কিছু সময়,মারমুখো কান্ডকারখানা আর পাড়ার সুন্দরী বালিকার প্রেমে পড়ার উপর এগোতে থাকে কাহিনী। সেই কাহিনীকে ঘিরে থাকে ফুটবলের উন্মাদনা,পুরোনো কিছু স্মৃতি,গল্পের নতুন কিছু মোড়।

প্লটটি ৯০'র দশকের শহুরে জীবনব্যবস্থার উপর নির্মিত। এখনকার মত তখন মুঠোফোন,কম্পিউটার কিংবা ইন্টারনেট কিছুই ছিলো না। ছিলো পাড়া জুড়ে কিশোরদের ছোটাছুটি,একরাশ অনুভূতি আর দারুণ সব ঘটনার ঘনঘটা। ৮০ বা ৯০ এর দশকে জন্ম নেয়া মানুষদের স্মৃতিচারণের জন্য একদম উপযুক্ত ছবিটি।

১৩৫ মিনিটের কমেডি-ড্রামা ফিল্মটি কলকাতায় তৈরি যার লেখক ও পরিচালক চন্দ্রবিন্দু ব্যান্ডের ভোকালিস্ট "অনিন্দ্য চ্যাটার্জী।"

ফোয়ারা চরিত্রে অভিনয় করেছে রিধি সেন,কিশোরী নায়িকা চরিত্রে সুরঙ্গনা ব্যানার্জি। তাছাড়া পার্শ্ব চরিত্রে ছিলেন বাঘা বাঘা অভিনয়শিল্পীরা- রজতভ দত্ত,পরাণ বন্দোপাধ্যায়,কৌশিক সেন,সোহিনী সরকার,সুদিপ্তা এবং রিত্বিক চক্রবর্তী।

আই.এম.ডি.বি রেটিং ৭.৬/১০ যেখানে টাইমস অব ইন্ডিয়া দিয়েছে ৩.৫/৫


লোডশেডিং (২০১৫)

৯০'র দশকে কলকাতায় লোডশেডিং যখন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার,ঠিক তখনই বেড়ে ওঠা দুই কিশোর কিশোরীর প্রেমের গল্পগুলো নিয়ে তৈরি হতে থাকে ছবির কাহিনী।

কিশোর প্রেমিক লোডশেডিংয়ের সময় মোমের আলোয় আলোছায়ার খেলা দেখাতো প্রেমিকাকে,সেখান থেকে ঘটে যেতে থাকে দারুণ অনুভূতির ব্যাপারগুলো। তবে তার পাশাপাশি প্রেমিকের চোখের সমস্যা গুরুতর হতে হতে একসময় অন্ধত্বে পরিণত হয়। এদিকে প্রেমিকাকেও একসময় পাড়া ছাড়তে হয়,স্মৃতি হিসেবে কিশোরের হাতে থাকে প্রেমিকার কতগুলো ভয়েস রেকর্ডিং ক্যাসেট। তারপর? দেখা যাক।

১১০ মিনিটের রোমান্টিক-ড্রামা মুভিটি পরিচালনা করেছেন "সৌকর্য ঘোষাল।" অভিনয়শিল্পী- রিধি সেন,মেঘলা দাসগুপ্ত,বিদিপ্তা চক্রবর্তী,অপরাজিতা ঘোষ,অনিমেষ ভাদুরি এবং আরো অনেকে।

আই.এম.ডি.বি রেটিং ৮.৩/১০


ফড়িং (২০১৩)

নর্থ বেঙ্গলে বেড়ে ওঠা এক কিশোরের নাম ফড়িং যার মন কিনা সর্বদা ফ্যান্টাসিতে পরিপূর্ণ,বেয়াড়া স্বভাব যাকে দিতে চাচ্ছে অবাধ স্বাধীনতা। কিন্তু দারিদ্র্যের কষাঘাত,বাবার শারীরিক অত্যাচার আর পড়াশোনায় বাজে ফলাফল জীবনটাকে যখন কঠিন করে তুলেছে ঠিক তখনই তার সাথে ঘনিষ্ঠতা হয় ইতিহাসের সুন্দরী শিক্ষিকা দোয়েল মিত্রের সাথে।

ফড়িংয়ের সৃজনশীলতার দিকে চোখ পড়ে শিক্ষিকার,পড়াশোনার উন্নতির জন্য নিজেই প্রাইভেট পড়ান ফড়িংকে। এদিকে বয়ঃসন্ধির উত্তেজনা উথলে ওঠে শিক্ষিকার নগ্ন পা দেখে,হস্তমৈথুন হয় তার আন্ডারওয়্যার শুঁকে। অনাবিল আনন্দে তার স্বর্গ সরগরম হয়ে ওঠে। পাশাপাশি হারিয়ে যাওয়া চিন্তাভাবনাগুলো ভাগাভাগি হতে থাকে একমাত্র বন্ধু লাট্টুর সাথে।

কিন্তু বিস্ফোরক দ্রব্য চোরাচালানে জড়িত থাকায় ধরা পড়ে দোয়েল মিত্র। জেলে যেতে হয় তাকে। ফড়িং-ও গ্রাম ছেড়ে পালায়,চলতে থাকে ঘটনাপ্রবাহ। শেষ পর্যন্ত?

১২৭ মিনিটের ড্রামা ফিল্মটি পরিচালনা করেছেন "ইন্দ্রনীল রায় চৌধুরী।" অভিনয়শিল্পী- আকাশ (ফড়িং), লাট্টু (সৌরভ), সোহিনী সরকার (দোয়েল মিত্র)। তাছাড়া পার্শ্বচরিত্রে ছিলেন রিত্বিক চক্রবর্তী।

আই.এম.ডি.বি রেটিং ৭.৬/১০

ছবিটি সেবছরই জিতে নেয় 'প্রাসাদ ল্যাবস পোস্ট প্রোডাকশন' আর সাংঘাই এ 'ভিনসেন্ট প্রাইজ' এর মত এ্যাওয়ার্ড গুলো।

টালিউড আর্টফিল্মগুলো বেশ ভালো হলেও আন্তর্জাতিক মহলে তত দূর যায় না বিধায় ক্রিটিক্স রিভিউ কিংবা আই.এম.ডি.বি রেটিং যথাযথভাবে হয় না। কখনো কখনো সঠিক মাত্রার চেয়ে অত্যধিক কিংবা অতি কম হয়ে থাকে। তাই রেটিংয়ের দিকে দৃষ্টিপাত না করে একবার বসেই দেখা যাক না? উপভোগ করাটাই তো আসল ব্যাপার..!!

সত্যযুগ চিঠিযুগ কলিযুগ


একটা সময় এ বঙ্গদেশে মোবাইল চালানোর মত ভাগ্যপুত্র ছিলো না। তাহারা বাহ্যিক যোগাযোগ এমনকি প্রেমিকার সাথে বার্তা আদান-প্রদান করিতো চিঠি দ্বারা। প্রেমিকাও প্রত্ত্যুত্বরে চিঠিই পাঠাইতো। সে চিঠি হাতবদল হইতো প্রত্যক্ষ উপস্থিতিতে নচেৎ নিকটাত্মীয়ের কেউ ডাকপিয়নের দায়িত্ব পালন করিত। আর যদি ভাগ্যদোষে একবার খালি অভিভাবকের হাতে পড়িয়াছে তো কপোত-কপোতীর ডানা তৎক্ষণাৎ কাটা পড়িত।

দিন বদলাইয়া যায় প্রেমের স্রোতে। আমি নাদান থাকিবার কালে দেখিয়াছি,বড় ভ্রাতা-ভগিনীরা তখন চিঠিই অধিক ব্যবহার করিত। পাছে ধনপুত্র কিংবা ধনকন্যাদের বাসায় কদাচিৎ টেলিফোন নামক তারবার্তা থাকিত।

নাবালক আর সাবালকের মাঝে যখন ঝুলিতেছি,তখন প্রেক্ষাপটও চিঠি আর মুঠোফোনের মাঝে ঝুলিতেছে। বয়সের গর্জনে প্রেম যখন অবশ্যম্ভাবী হইয়া উঠিল,ঠিক করিতে পারিলামনা কোন পন্থা অবলম্বন করিবো।

সে ধনকন্যা হইলেও আমি ধনপুত্র কিংবা ফকিন্নিপুত্র কোনোটাই ছিলাম না। মাঝামাঝি ঝুলিতেছি,তাই দুটো পন্থাই আকড়াইয়া ধরিলাম।

মুঠোফোনে পয়সা ঢুকান ততটা সহজলভ্য ছিলো না বিধায় ভাগ্যদোষেই হোক কিংবা কন্যার রগচটা বাপের দোষেই হোক,বড় বাক্য প্রেরণে চিঠিই চলিত। পাছে কন্যার পরিবার বড়ই জাউড়া,প্রযুক্তি সম্পর্কে টুকিটাকি খোঁচাইতে জানে। উপরন্তু ধনকন্যাদের সাথে সর্বদাই কিছু খাটাশ রকমের বড় ভাই,কাকা,নানী-দাদী থাকে। তাহাদের কাজ কন্যাকে সর্বদা চিতায় তুলিয়া রাখা।

প্রেমের চিঠির ক্ষেত্রে সুবিধা হইতেছে,তাহা আশঙ্কাজনক সময়ে তৎক্ষণাৎ পুড়াইয়া কিংবা ডুবাইয়া ফেলিবার যায়। অসুবিধা আরও মারাত্মক,প্রাপক ব্যতীত অন্য কারো হাতে পড়িলে লজ্জ্বায় মাথাকাটা এমনকি সত্যি সত্যিই মাথাকাটা পড়িতে পারে।

একবার প্রেমিকার চিঠির উত্তর দিয়াছিলাম। সে চিঠি তাহার ব্যাগ হইতে কিভাবে যেন খসিয়া পড়ে। অতঃপর,লজ্জ্বায় আমার মাথাকাটা গেলো। যতদিনে টের পাইলাম ততদিনে সে চিঠির ফটোকপি জনগণের মাঝে আকাশে-বাতাসে উড়িতেছে।

সত্যযুগে কপোত-কপোতীরা চোখ টিপিয়া কিংবা অঙ্গভঙ্গি করিয়াই প্রেমবার্তা পাঠাইতো। পায়রার পায়েই হউক আর কাউয়ার পায়েই হউক,চিঠি উড়িত দেশ-দেশান্তরে।

পরে আসিলো চিঠিযুগ। প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ যে পন্থায়ই হউক,শেষ যুগে যন্ত্রের পাশাপাশি আমরাও তাহার স্বাদ পাইয়াছি।
চিঠিযুগ পুরোটাই পরপারে গিয়াছে। এখন কলিযুগ চলিতেছে। মুঠোফোনে চিঠি উড়ে,মুহূর্তেই প্রেরণ হইয়া যায়। অভিভাবকের ধরিবার ক্ষমতাও নাই। কারণ,যন্ত্রের ভেতর মারাত্মক পর্যায়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থা বিদ্যমান।

তবে সত্যযুগ কিংবা চিঠিযুগ যাহাই হউক,কলিযুগের যুগলরা যতই আধুনিক হউক না কেনো,সাদা পৃষ্ঠা আর কলম হাতে রাতের পর রাত,দিনের পর দিন,চিঠি আাদান-প্রদানের যে উত্তেজনা আর অনুভূতি,তা তাহারা কষ্মিনকালেও পাইবে না।

বড়ই আপসোস..!!

মিসির আলির সাথে কিছুদিন

ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি,হঠাৎ একটা টেলিফোন কল।
মিসির আলি ফোন দিয়েছেন।
- মুয়িদ,তোমার জন্য একটা জিনিস আছে।

- কি সেটা,স্যার?

- একটা ইউনিক ব্যাপার। এই প্লটের উপরই দারুণ গল্প লিখতে পারবে। শুনবে?

কাহিনীর সংক্ষিপ্ত রূপ শুনলাম। খাসা আইডিয়া। লেখার আগে গল্পের নামও ঠিক করে ফেলেছি,"প্রত্যাবর্তন।" মিসির আলি স্যার কে অসংখ্য ধন্যবাদ জানিয়ে ফোন রাখলাম। কিছুক্ষণ বাদে আবার নিজেই ফোন দিলাম।
- স্যার,আপনি কি জানেন আমি কোন কলেজ থেকে ইন্টার পাশ করেছি?

- নাহ,জানার তো কথা না।

- হাজী মিছির আলি কলেজ।

- ভালো। কিন্তু এটা আমার নামে তো নয়। আমি হজ্জ্ব করিনি,তাই হাজীও নই।

- তা ঠিক স্যার,আর আপনার নামের মধ্যে "স" আছে। আমার কলেজের নামের মধ্যে "ছ" দেওয়া।

- মুয়িদ,ঈদের ছুটি হয়নি?

- হয়েছে। বাসায়ই যাচ্ছি,কুরবানীর ঈদ। গরু-টরু কিনতে হবে। আপনি গরু কিনেছেন স্যার?

- আমি একা মানুষ,আত্মীয় তেমন নেই। কুরবানীর প্রয়োজনও হয় না।

- স্যার,আমার সাথে চলেন। কয়দিন থাকবেন আমার সাথে।

- কি করবো গিয়ে?

- আপনার রহস্যভরা গল্প বলবেন আর গরুর কালাভুনা খাবেন।

- আমি খাওয়াদাওয়ায় আগ্রহী নই।

- আমি যথেষ্ঠ আগ্রহী। চলুন তো।

- ঠিকাছে,এখন কোনো কাজও করিনা। বেকার সময় যাচ্ছে। চলো তাহলে।

অতঃপর,স্যারকে ব্যাগে পুরে রওনা দিলাম বাসার দিকে। বারোদিন পেরিয়ে গেছে,আমাকেও মিসির আলির বারোটা উপন্যাস বলা হয়ে গেছে।

এখন ফিরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। মিসির আলি স্যারকেও ব্যাগে ঢুকিয়ে ফেলেছি। ফিরে যেতে যেতে হয়তো টুকটাক কথা হবে।

স্যার যেখানে চান,নামিয়ে দেবো। নাও দিতে পারি। আজ যা রোদ পড়েছে..!!

আমি মধ্যবিত্ত


হ্যাঁ,আমি মধ্যবিত্ত।

মধ্যবিত্ত বলেই তোমার সন্তানকে পড়িয়ে নিজের হাত-খরচা জোগাড় করি। মধ্যবিত্ত বলেই ক্রোশ পথ পায়ে হেঁটে টিউশনিতে যাই। কেননা মধ্যবিত্তের ঘরে পকেটমানি চাইতে বুকে বাঁধে।

বাদ দিলাম পকেটমানি। বয়স তো হয়েছে ভালোই। আমারও তো পরিবারকে কিছু দিতে ইচ্ছে করে। বাবার পান্জাবী,মায়ের শাড়ি টা নতুন করে দেখতে ইচ্ছে করে।

তুমি তো বড়লোক। সন্তানকে বড় বড় স্কুল-কলেজে পড়াও। তোমার এত দীনতা কেনো?

তোমারই একটা গল্প শুনবে? শোনো।

মাস চারেক আগে তোমার মেয়েকে পড়াতে বললে। তোমায় আমি চিনিনা। আমায় বললে,তোমার তেমন কিছু নেই। তোমার মেয়ে ভিকারুন্নিসার সেকেন্ড গার্ল। খুবই ব্রিলিয়ান্ট। সপ্তম শ্রেণী। হাতে তখন এস.এস.সি বা এইচ.এস.সি কোনোটারই ছাত্র নেই। টিউশনিহীনতার কারণে তোমার বাচ্চাকে পড়াতে রাজি হলাম। মাত্র চার হাজার টাকায়। তুমি এর বেশি দিতে পারবেনা। কারণ,তোমার নাকি সামর্থ্য নেই।

সাড়ে চার কিলো পায়ে হেঁটে যেদিন তোমার বাসায় ঢুকলাম,দারোয়ানের কাছে জানতে পারলাম তুমি আর্কিটেকচার। এই আটতলা এ্যাপার্টমেন্ট তোমারই। প্রাডো আর মিতসুবিশি দুটো গাড়িই তোমার।

মেজাজ টা চড়ে গেলেও তোমায় কিছু বলতে পারি নি। কারণ,আমি হতবাক তোমার কৌশলে। লজ্জ্বা টা বেশি বলে হয়তো  মুখটা আজও খুলতে পারিনি।

প্রথমে পড়াতে বললে রাত আটটায়,দুদিন পর ন'টায়,আরও দুদিন পর দশটায়। কারণ,তোমার মেয়ে দশটার পর পড়তে বসতে চায় না। নিজের পড়া পড়ে,আরও কাজ করে তোমার বাসায় আসতে যেতে নয় কিলো পথ পাড়ি দিতে হতো।

আমি কি ছাত্র নই?আমি তোমায় বলা সত্ত্বেও রাজি হলেনা। আমাকে রাতেই যেতে হবে। পড়ানোর পরিমাণ বাড়াতে হবে,সময় বেশি দিতে হবে। কিন্তু তোমার অর্থ প্রদান বাড়েনি।

আমি পড়ানোর সময় তুমি পাশে এসে দাঁড়িয়ে থাকো। পাছে আমি পড়ানোয় ফাঁকি দেই। ঘর্মাক্ত ব্যাচেলর ছেলেটির শুকনো মুখ দেখেও তোমার ঘরে কখনো পানির দেখা পাই নি। নাস্তা তো রাজার খরচ।

কানের সামনে রেডিও বাজাও,আরো বেশি সময় দেন। সাবজেক্ট বেশি। হপ্তায় পারলে পাঁচদিন আসেন,পরীক্ষা নেন বারবার। প্রশ্ন প্রিন্ট করে দেন। সিস্টেম বদলান বারবার যাতে পড়ায় মনোযোগ বাড়ে সন্তানের। কিন্তু তোমার বেতন প্রদানের সিস্টেম বদলায় নি। লজ্জ্বায় বলতেও পারিনা। মধ্যবিত্ত ছেলেদের লজ্জ্বা বোধহয় একটু বেশি ই।

শুধু তুমি না। তোমার মত হাজারে এরকম আরো দু-চারজন আছে। তোমারই সতীর্থ একবার নিজের সন্তানকে পাঁচদিন ছুটিতে রেখেছিলো। আবার সেই পাঁচদিনের ছুটি দাবিতে অর্ধমাসের বেতন দিয়েছিলো। কোন যুক্তিতে এ কাজ,আমি হতভম্বতায় আজও বুঝিনি। লজ্জ্বায় মুখে বুলি ফোটাতে পারিনি। পকেটটা অর্ধহালকা অনুভবে রাস্তায় হেঁটেছিলাম দীর্ঘক্ষণ।

এই শহরে নামী-দামী প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের ভিড়ে টিউশনি পাওয়া খুব কঠিন। তারপরও টিউশনি খুঁজি। তুমিও কম টাকায় স্বার্থ হাসিলের জন্য আমার মত ছাত্রদের শিক্ষক হিসেবে রাখো।

শোনো অভিভাবক,কাকের ঘরে কাকই হয়,কোকিল হয় না। নিচু মানসিকতা বদলাও। কম খরচে সন্তানের ভালো রেজাল্ট আশা করা তোমার অন্যায়।
যে তোমার সন্তানকে পড়াচ্ছে,সে আমিও একজন ছাত্র। আমারও পড়াশোনা আছে,কাজ আছে,অন্য একটা রঙিন দুনিয়া আছে।

আমার মত হাজার ছাত্র নিজের জন্য তোমার মত হাজার অভিভাবকের সন্তানকে পড়াচ্ছে।

দয়া করে শিক্ষক নামক সেই ছাত্রের অসহায়ত্বের সুযোগ নিও না।

স্বপ্নের কালকথা


আমি ঘুমের মধ্যে মাঝে মাঝেই হঠাৎ চোখ মেলি। নাহ্,নিশি নয়। দিনে-দুপুরে কাউকে নিশিতে পায়না।

গত সাত বছর ধরে খুঁজছি কিছু। কেউ কেউ গল্পের মাঝটা জানে। আমিই ভুলে গেছি সর্বাংশের শুরুটা।

আজ হুমায়ূন আহমেদ স্যার এলেন। সাথে একজন অতিথি ছিলো। অতিথিটি আসলে তার না আমার,আমি জানিনা। মাসখানেক তার কোনো বই পড়িনি। সুতরাং,'প্রভাবয়িত স্বপ্ন' ঘটানোর সুযোগ নেই।

এসেই টেবিলের সামনে রাখা চেয়ার দুটোতে দুজন বসলেন। ঘরটা আমার কাছে অপরিচিত। স্কচ ট্যাপ আর কি একটা যেন চাইলেন। স্যারের ডায়েরি ছিড়ে গিয়েছে বোধহয়। আমি পাশের রুমে কি একটার জন্য আসতেই অতিথিকে ফিসফিসিয়ে বলতে শুনলাম,
- মুয়িদুল ছেলেটাকে আপনার কেমন লাগে?

- ব্যক্তিগতভাবে ভালোই লাগে,কিন্তু কখনো প্রকাশ করিনি।

আমি সামনে যেতেই আমাকে বললেন,
- "বিথিরোড" টা চেনো?

আমি নিঃশব্দে মাথা নাড়তেই বললেন,
- ওখানে লাশ ফেলা হয়। যদি চাও,যেতে পারো। সাইকেল নিয়ে যেও। যদিও দিনে লাশ দেখতে পাওয়া যায় না। রোড টা বেশ সুন্দর। ডায়েরিতে তোমার নাম্বার টা লেখো তো..

আমি আমার ফোন নাম্বার লিখতে গিয়ে কলম পাচ্ছিনা। স্যার একটা কলম দিলেন। সেটাতেও কালি আসছে না। যাও আসছে,আমি ডিজিট মনে করতে পারছি না। আমার সংখ্যাভীতি আছে। ২০০৯-১০ এর দিকে পলিনড্রেমিক নাম্বার নিয়ে একটু বেশি ঘাটাঘাটিতে আমার এই সমস্যার সৃষ্টি।

স্যার আমার দিকে তাকিয়ে হাসলেন। ওনার ফোন নম্বর আমাকে দিতে গিয়ে খেয়াল করলেন,ওনারও ডিজিট মনে পড়ছে না। চেয়ার ছেড়ে উঠতে উঠতে বললেন,
- রোডটার কথা মনে রেখো। স্বপ্ন তো,স্মৃতি না থাকার সম্ভাবনা বেশি।

বলতে বলতে হাওয়ায় মিলিয়ে গেলেন। আমি চোখের পাতা হঠাৎ খুলে দেখি,চোখের সামনে একটা রৌদ্রজ্জল সড়ক খা খা করছে। কিন্তু,তাতে কোনো লাশ নেই।

উদ্ভট স্বপ্ন দেখা সাধারণ মানুষের কর্তব্যে পড়ে। মস্তিস্ক আমাদের নিয়ে সর্বদা খেলে। আমরা বাস্তববাদী সাজার জন্য স্বপ্নের জগৎটাকে একপাশে ঠেলে রেখে দেই।

মনে আছে,২০১০ এর দিকে "টানিন" নামের এক জায়গায় গিয়ে ভরদুপুরে বসে থাকতাম। সেখানে খুন করে লাশ ফেলে রাখা হতো। এলাকাটা মরুময় আর ঘাসময় ছিলো। ডাকিনীবিদ্যা নিয়ে ঘাটাঘাটিতে ছিলাম আর টিনেজ বলে ব্যাপারটা বুঝিনি তখন। একদিন সে গল্পগুলো জমাবো নে।

২০০৮ এর দিকে সম্ভবত আমি স্বপ্ন দেখার সত্যিকার শক্তি টের পাই। তারপর থেকেই দৌড় শুরু। "কোয়ান্টাম পদার্থবিদ্যা" আর "কোয়ান্টাম মেথড" এর সংমিশ্রণে ঢুকি। পরবর্তীতে এক সংঘের মাধ্যমে পরিচয় হয় "প্যারাফিজিক্স" এর সাথে।

২০০৯ এর দিকে আমি "কল্পবাস্তব জগতে" পা রাখি। একা একাই। সাথে আরেকটা জগতে। ডাকিনীবিদ্যা।
প্রথমদিকে ক্ষমতার নেশায় শুরু করলেও পরে ফেরত আসা হয়। কিন্তু ঘাটাঘাটি চলতেই থাকে। মিশরীয় মিথে বিশ্বাসী আমি;যোগাযোগ হয় ইন্টারনেটে কিছু প্রতিষ্ঠানের সাথে। পরিচয় হয় ইন্ডিয়ান কিছু তান্ত্রিকের সাথে।

আমেরিকান কয়েকজন ভলান্টিয়ার্স ইন্টারনেটে আমাকে পরিচয় করায় তৃতীয় শক্তির জগতে।গবলিন,পাক,ঔগার,ইনকিউবাস,পিক্সি,গোগ্রান,ব্যানসী আরও শতও কতও নাম..!! পরিচিত তান্ত্রিকেরা আমায় শিখিয়েছিলো কিছু যুক্তির চিত্র যাতে পরাশক্তি ভর করতে পারে। বছরখানেক আগে চিত্রগুলো কোনো এক কারণে পুড়িয়ে ফেলতে হয়। আমার নব্বই শতাংশ লিখিত জ্ঞান পুড়িয়ে ফেলতে হয় আমাকে। এখন কয়েক টুকরো কাগজ আছে শুধু..!!

আমার সেলেনা আন্টির কথা বেশ মনে পড়ে যিনি আমায় বলেছিলেন,তিনি তার তিনমাসের ছেলে বাচ্চাটাকে তার পালা অজগর সাপকে খেতে দিবেন। "মিডিয়াম থ্রি" মানে "আত্মাভরবাদে" নিযুক্ত ছিলেন উনি। সেই টিনএজ বয়সে ইন্টারনেট সহজলভ্য ছিলো না। এক বছরের মাথায় সকল সংঘের সাথে যোগাযোগ হারাই আমি।

ক'দিন আগে ডেঙ্গুতে ছিলাম। দিনরাত শুধু ঘুম। স্বপ্নে দেখলাম,একটা তিনমাসের বাচ্চাকে অজগরের মুখের সামনে ছুড়ে ফেললো একদল ছেলে। দেয়ালের ওপারে বিশালদেহী এক মহিলা হাসছেন। সম্ভবত সেলেনা আন্টি।

মাঝের পাঁচ বছর শুধু ঘুরেছি আর পড়েছি। একসময় প্রিয়তমার খাতিরে একবছর নিষিদ্ধ করে রেখেছিলাম ঘাটাঘাটি। পরে দেখলাম,আমার জগৎ টা একদম আলাদা সব থেকে। আমি বের হলে পাপ হবে।
গুল মারা ভাবলেও মাঝে মাঝে আমি অবাক হয়ে যাই যে,না চাইতেই তৃতীয় শক্তি কোনভাবে আমার মধ্যে ঢুকে পড়েছিলো। ২০১৩ সালের দিকে কয়েকজন বান্ধবী বিষয়টা জানায় আমায়। টেলিপ্যাথি আর স্বপ্ন নিয়ন্ত্রণে তখন বিশ্বাসী হয় ওরা।

কোয়ান্টাম মেকানিক্স সবসময় আমায় সাপোর্ট দিয়েছিলো। সাথে ছিলো প্যারাফিজিক্স।

স্বপ্ন দেখা,যতটা জটিল ভাবা হয়,আমার কাছে তার থেকেও জটিল লাগে। ডাকিনীবিদ্যায় প্রবেশের আগে স্বপ্ন নিয়ন্ত্রণ নিয়েই ছিলাম। কয়েকটা শক্তি এখনও উল্টো আমায় নিয়ন্ত্রণ করে। এমনকি ক'দিন আগেও স্বপ্নের তৃতীয় শক্তিস্তরেও পৌঁছাতে পেরেছি নিজের অজান্তেই। "ক্যাথলাস" গল্পটা লেখার পরে।

আমার জীবনটা হাস্যকর। এমন এক জগতে ঢুকেছিলাম সাত বছর আগে,যার কোন ভিত্তি থাকলেও ভিত্তি নেই। ঐশ্বরিক শক্তি তার পাশে শয়তানিক শক্তি স্থান পেলেও আমি তৃতীয় কোনো শক্তিকে জানার জন্য দৌড়োচ্ছি। স্বপ্নের বিজ্ঞানভিত্তিক বিশ্লেষনের বাইরের যেসব শক্তিশালী বিশ্লেষণ আছে,সেসব না হয় আরেকদিন হবে।

আপাতত স্বপ্ন নয়,এমনকি কোনো ডাকিনীবিদ্যাও নয়; "মেজমেরিজম" নিয়ে কিছুটা পড়তে চাচ্ছি। পড়ায় মনযোগ আসছে না। বাইরে বোধহয় ঝড় শুরু হবে। গত সাত বছরের জ্ঞানগুলো দপদপ করে মাথায় জ্বলছে। এত বিষয় ঘাঁটা হয়েছে যে,মগজটাই ঘেঁটে গিয়েছে।

কে জানে,তৃতীয় শক্তি হয়তো পাশে বসেই আমায় দেখে হাসছে..!!

নীলচিত্রের বিবর্তন


-নীল ছবি কি?

-এইটা কোনো কথা..!! যেই ছবির রং নীল,তারেই নীল ছবি কয়। যেমন আকাশের ছবি,সাগরের ছবি হেন-তেন।

এখনকার জেনারেশনের কাছে নীল ছবি যতটা সহজলভ্য,আমাদের সময় সেইটা ছিলোনা বললেই চলে। বহুৎ দৌড়াদৌড়ি কইরা খায়েশ মিটাইতে হইতো।

নব্বইয়ের দশকে বাজারে সিডি আকারে পাওয়া যাইতো। ব্লু ফিল্মের সিডি। আমরা নানারকম সংকেতে ডাকতাম। ভূতের সিনেমা,বিজ্ঞাপন,বক্কর আরো কত কি..!!

একদিন এক বন্ধু কইলো,মামা,ভূতের সিনেমা দেখবি? দেখমুনা মানে? অবশ্যই..!! গিয়া দেখলাম সেইটা মডিফাইড ভুত। দরজা জানালা বন্ধ,রুদ্ধশ্বাসে ভুতের সিনেমা চলতেছিলো ভিসিআরে। কিন্তু মাঝপথে দরজায় টোকা পড়ে বন্ধুর বাপের। তরিঘরি কইরা টিভি আর ভিসিআর অফ করা হইলো,দরজাও খোলা হইলো কিন্তু সিডিটা বাইর করার কথা কারোরই মনে নাই।

- কি রে,দরজা জানলা বন্ধ কইরা সবাই কি করতাছোত?

- এইতো আব্বা,গল্প করি।

- এ্যামনে কেউ গল্প করে? দাঁড়া,তগোরে ভিসিআরে গান ছাইড়া দেই।

অতঃপর,বন্ধুর বাপের হাতে ভিসিআর অন,সুন্দর সুন্দর শব্দ এবং সবাই দৌড়াইয়া ঘর থেইকা বাইর হইয়া যাওয়া।
অলৌকিক ব্যাপার,সেই মুহূর্তে বন্ধু বড়ই চেস্টা করতেছিলো রিমোট দিয়ে ভিসিআর বন্ধ করার কিন্তু রিমোট কাজ করতেছিলোনা।

ওর বাপরে দেখছিলাম,কাঠের ডাসা লইয়া ঘরের ভেতরে ঢুকতে। আর কিছু জানিনা।

যখন হাই স্কুলে পড়ি তখন মাল্টিমিডিয়া সেট হাতে হাতে। সবার ব্যাগ কিংবা প্যান্টের চিপায়-চুপায় ফোন লুকায়িত থাকতো। স্যারেরা সেইসব ফোন ছিনতাইয়ের ধান্ধায় থাকতেন।

এর ওর কাছে দৌড়াদৌড়ি কইরা ব্লুটুথে ঘন্টার পর ঘন্টা লাগায়া তথ্য আদানপ্রদান চলতো।

তখন কম্পিউটার দোকানদারের ব্যবসা তুঙ্গে। বিশ-পঁচিশ টাকায় এক জিবি। বন্ধুমহলে যে যার থেইকা যত বেশি কালেকশন আর যত বেশি নায়ক-নায়িকার নাম মনে রাখতে পারে তার স্ট্যাটাস তত উপরে। আশিক বানায়ার মত গানও টু-এক্স এর সমপর্যায়ে ধরা হইতো।

একদিন এক বন্ধু ফোনসমেত ধরা খাইলো। স্যার ফোন নিয়া গেলেন। টিফিন পিরিয়ডে টিচার্স রুমে উঁকি দিয়া দেখি স্যার সেই ফোন হাতে কি জানি দেখতেছেন আর মিটমিটায়া হাসতেছেন।

সাইবার ক্যাফেগুলাতে পোলাপাইন ঢুকতো জোশ নিয়া,বাইর হইতো রুমাল দিয়া ঘাম মুছতে মুছতে। এমনও হইছে,একই ঘরের বড় ভাই ঘাম মুছতে মুছতে বাইর হইতাছে,পাশে তাকায়া দেখে ছোটভাইও ঘাম মুছতাছে।

২০১০ সালের দিকে RAB'রা আক্রমণ চালাইলো কম্পিউটারের দোকানগুলাতে। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে শতশত মামলা জমা হইলো। তখন ব্যবসাটা একটু নিমাইয়া গেছিলো। তের সালের দিকে পুরাপুরি নিমাইয়া গেলো। হাতে হাতে স্মার্টফোন,ওয়্যারলেস ডাটা কানেকশান আর শেয়ার ইট এ্যাপ যুগান্তকারী পরিবর্তন আনলো।

ইন্টারনেট দুনিয়া হঠাৎ কইরাই ছড়ায়া গেলো। পিসিগুলা ভরতে লাগলো হাই রেজুলেশনের জৈবিক ভিডিওতে।
স্ট্যাটাস নির্মিত হইতো,কার কাছে কত হাই রেজুলেশনের ভিডিও আছে আর সংগ্রহকারীর স্ট্যাটাস নির্মিত হইতো কে কত বেশি ডাউনলোড সাইটের নাম জানে।

একটা বয়সের পর সবাই ইন্ড্রাস্টিয়াল থেইকা দেশী হ্যান্ডমেড ভিডিওতে ঝুঁকে। কারণ,ব্রয়লার আর দেশি মুরগির মাংসের স্বাদে বিস্তর ফারাক। রমজান মাস আসলেই দেশের লাখ লাখ পিসির হার্ডডিস্ক খালি হইয়া যাইতো। পোলাপাইনের মুখে ডিলিট করার সময়ে শোকের ছায়া। ইস মামা,ফুল এইচ ডি ছিলো..!!

কোনো একটা ফোনের দিকে দুই-তিনজনের একসাথে তাকায় থাকা মানেই উল্টাপাল্টা কিছু দেখতাছে। তথাকথিত এক বন্ধু বছর দুই আগে ল্যাপটপে সৃজনশীল ভিডিও দেখতেছিলো। হঠাৎ ঘরে মা'র প্রবেশ। বন্ধুবর হতচকিত হইয়া ডিসপ্লে বন্ধ করছিলো বটে কিন্তু তাতে সাউন্ড বন্ধ হয়নাই। সাউন্ডবক্সে ব্যাকগ্রাউন্ড প্লেব্যাক ঠিকই চলতেছিলো।

মা'র আর্তচিক্কুর,আমার পোলা নষ্ট অইয়া গেছে। সব নুরজাহানের পোলার দোষ..!!

যাহাই হউক,এরকম হাজারো ঘটনা রূপকথার মত দেশের আনাচে কানাচে ছড়ায়া আছে। চটি বই থেইকা শুরু কইরা তথ্য প্রযুক্তির উন্নতির ফলে ঘটনাপ্রবাহ পরিবর্তন হইছে,কিন্তু রূপকথার ভিডিও এখনও চলতেছে। কারণ,৯৮শতাংশ টিনএজ ই নিষিদ্ধ বিষয়ে বুদ্ধির বিকাশ ঘটায়।

অনেকে নাক সিঁটকায় ঠিকই তবে সেটা জনগণের দ্বিতীয় চরিত্র। তাদের মতে,"আমি ভালো মানুষ,এসব দেখা ঠিক না।"
আমি আবার দ্বৈত চরিত্রে বিশ্বাসী না। কেননা,একদা তান্ত্রিক বন্ধু শিখাইছিলেন,
"যোগাসন ই হোক আর যৌনাসন ই হোক,দুইটাই সুস্থ জীবনের উদ্দেশ্য।"

প্রত্যুত্তরে আমি বুঝিয়াছিলাম,
"সকল ক্রিয়াই কর্ম আর সেক্স ই জৈবিক ধর্ম।"

একজন সুখী রিক্সাওয়ালার গল্প


রাত ১২টায় চা খেতে বেড়িয়েছিলাম। হঠাৎ ইচ্ছে হলো,একটা সিগারেট নেয়া যাক;বহুমাস টানা হয়না। ফুঁকতে ফুঁকতে সামনে এগোচ্ছি,পিছন থেকে স্বর ভেসে এলো,

- টানতে না পারলে শুধু শুধু কিনেন ক্যান?

তাকাতেই দেখি একজন রিক্সাওয়ালা এগিয়ে আসছেন। বয়স চল্লিশের কাছে। হাত থেকে সিগারেটটা নিয়ে আগুনের দিকটা অদ্ভুত কৌশলে মুখে পুড়ে দিব্যি শেষ করে ফেললেন।

কিছুটা হতচকিত আমরা,অতঃপর গল্প শুরু।

গল্পে গল্পে তিনজনই গল্পের ভীড়ে হারিয়ে গেলাম। আমরা দুজন রিক্সার সিটে আর রিক্সাওয়ালা রিক্সার হ্যান্ডেলে বসে আছেন। গল্প চলছে। তার কৈশরে বিয়ের কাহিনী,বাড়ি থেকে সমুদ্রে যাওয়া,জাহাজ ভ্রমণ,চরান্ঞ্চলের খুনোখুনি,অবৈধ প্রেম আরো কত কি। তার এই পুরো জীবনটা নিয়ে তিনি বড়ই সুখী।

পুলিশের গাড়ি এসে টহল দিয়ে যায়,কিছু দূরেই আনসাররা বসে বসে আমাদের আড্ডা দেখছে। বেশ হচ্ছিলো। দুইঘন্টা গল্পের পর উনার পান খাওয়ার বাতিক উঠলো। আমাদের জোর করে রিক্সায় তুলেই উনি পানের উদ্দেশ্যে বের হলেন।

হঠাৎই নেমে এলো ঝুম বৃষ্টি।

একজন রিক্সাওয়ালা দুজন অচেনা ছেলেকে তার রিক্সায় নিয়ে মনের সুখে ঘুরে বেড়াচ্ছেন শহরের এমাথা থেকে ওমাথা। রিক্সার হুড খোলা,বৃষ্টির ফোটাগুলো যেনো এক একটা বরফের কনা।

আমি সুখী রাজকুমারের গল্প পড়েছি,কিন্তু একজন সুখী রিক্সাওয়ালাকে নিজের চোখে দেখেছি যে কি না তিনঘন্টা প্যাসেঞ্জার বহন বাদ দিয়ে দুজন ছেলেকে জীবনের গল্প বলেছেন।

গল্পের ওপারে এই মানুষটি আমাদের এতটাই পছন্দ করেছেন যে বিনে পয়সায় শহর ঘুরিয়ে বাসায়ও পৌঁছে দিয়ে গেলেন। পথিমধ্যে নিজে পান খাওয়ার সময় আমাদের চাও খাওয়ালেন।

প্রতিদিন নেশার মত এই নৈশভ্রমণ আমাদের যা দিচ্ছে তা হয়তো অন্যরা সারাজীবন খুঁজেও পাবেনা। কেননা,গল্পরা বোধহয় ঘরে থাকেনা। মহাসড়ক কিংবা গলির পথের ইটেয় ইটেয় ছড়িয়ে থাকে। একজন ২২বছরের আমি'র কাছে এর চেয়ে ভালো গল্প বোধহয় হয় না।

ঠিক করেছি,একদিন আমার উত্তরাধিকারীদের গল্প বলবো।

শতমাইল হাঁটার গল্প।

বয়ঃসন্ধির ডায়েরী


আজকের মত সেদিনও বৃষ্টি হচ্ছিলো। ঝিরঝিরে নয়,ঝুম বৃষ্টি। নিতান্ত সৌজন্যবোধের কারণেই দেখা করতে গিয়েছিলাম।

নিউমার্কেট রাস্তার মাঝ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি,আশেপাশের মানুষগুলো সব হাঁ হয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। কোনো মহানায়কের হেঁটে যাওয়ার দৃশ্য নয় সেটা, কৈশোর পেরোনো সদ্য এক তরুণ ভারী বর্ষণে জুবুথুবু হয়ে হেঁটে চলেছে,ফিটফাট ড্রেসে,বিরক্ত ভঙ্গিতে।

রাস্তায় কোনো বাহন চলছেনা,এতটাই বৃষ্টি..!! আশেপাশের ফুটপাতে অগনিত মানুষ দাঁড়িয়ে আছে বৃষ্টি থেকে বাঁচতে। খানিকটা অস্বস্তি লাগছে,পাছে বোধহয় আমাকে উন্মাদ ভাবছে। কেউ কখনো ফিটফাট হয়ে বৃষ্টিতে ভেজে না।

নিউমার্কেটে কোন গেইট দিয়ে প্রবেশ করেছিলাম,খেয়াল নেই। তবে সে গেইটে তত মানুষ আশ্রয় নেয় নি। গেইটের নিচে বিরক্ত মুখে দাঁড়িয়ে আছি,কাকভেজা হয়ে গেছি। ফোন,মানিব্যাগ সবকিছুতেই পানি ঢুকে গেছে। রুমালটা তাড়াহুড়োয় ফেলে এসেছি। রুমাল আর ঘড়ি ছাড়া কখনো বেড়িয়েছি বলে মনে পড়ছেনা। আজই এমন হলো..!!

হঠাৎ একখানা রুমাল বাড়িয়ে ধরলো কেউ। অতি ধবধবে ফর্সা একটা হাত সে রুমালটা ধরে আছে। হকচকিয়ে চেহারার দিকে তাকালাম,একজন অপ্সরী দাঁড়িয়ে আছে আমার পাশে। চিনতে পারলাম তাকে। একেই সৌজন্যবোধটুকু দেখাতে এসেছি আমি। স্বেচ্ছায় নয়,অনিচ্ছায়।

আশেপাশের লোকজন তাকিয়ে আছে আমার দিকে। তাদের চোখে অদ্ভুত দৃষ্টি। হয়তো এই রূপসীর পাশে আমায় মানাচ্ছেনা।

বিব্রতকর অবস্থায় বেশ খানিকটা সময় পেড়িয়ে গেলো,তখনও রুমালটা আমার সামনেই ধরে রাখা হয়েছে।
- আমি আপনাকে বৃষ্টিতে ভিজে আসতে বলি নাই,ভিজে আসছেন কেনো?

- তুমি ই তো বললা,সময় নাই। ফেরার বাস ধরতে হবে। এতদূর থেকে আসছো,সৌজন্যবোধেরও তো একটা ব্যাপার আছে।

- সৌজন্যবোধ না,এটা কর্তব্য। সারা দুনিয়াতে ছেলেদেরই যেতে হয় মেয়েদের কাছে দেখা করতে,আপনার সেই ক্ষমতাও নাই।

- মেয়েদের কাছে কাছে গিয়ে দেখা করার অভ্যাস নাই আমার। আমি পারবোও না সেটা।

- তা পারবেন কেনো? সাহস থাকা লাগে তো সেসব করতে। বৃষ্টিতে ভেজানোর জন্য দুঃখিত। রুমালটা ধরেন,মাথা মোছেন।

- আমি অন্যদের রুমাল ব্যবহার করিনা।

- আমি নাক মুছিনা এই রুমাল দিয়ে,ঘেমে গেলে শুধু মুখ মুছি। ভয়ের কিছু নাই,ধরেন। মাথা মোছেন,ঠান্ডা লেগে যাবে।

রুমালটা হাতে নিলাম। ভারী মিস্টি একটা গন্ধ। খানিকটা মোহাচ্ছন্ন হয়ে পড়লাম। হয়তো দ্বিতীয়বার তার গায়ের গন্ধ পেলাম..!!
- রুমালটা ফেরত দিন দয়া করে।

- মানে? নোংরা করে ফেলেছিতো মাথা মুছে। আমি চুলে জেল দেই। রুমাল তো আঠা আঠা হয়ে গেছে।

- কখনো তো কিছু দেন নাই,নোংরা হওয়া রুমালটাই ফেরত দিন দয়া করে? অন্তত আমার কাছে একটা স্মৃতি তো থাকুক..!!

আমি ভীষণ ভয় পাচ্ছি। প্রচন্ড সুন্দরীদের বরাবরই ভয় আমার। ছুটে পালিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে,কিন্তু পা নড়ছে না। হয়তো মোহনীয় সৌন্দর্যের ফাঁদে পড়েছি।

- আমার খিদে পেয়েছে। রেস্টুরেন্টে চলেন।

- আমার কাছে টাকা নেই অত। রিক্সা ভাড়া ছিলো,শুধু সেটাই আছে।

- সেটা আপনার ভাবতে হবেনা। কখনো তো খাওয়ানও নাই,কিপ্টা কোথাকার। আসেন তো।

আমার হাত ধরে টান দিলো সে অপ্সরী,আমি প্রচন্ড বিব্রতকর অবস্থায় হাঁটছি তার পাশে। হাত ছাড়াতেও পারছিনা। হয় অতি ভয়ে,নয়তো আমিও চাইছিনা সে আমার হাত ছাড়ুক।
.
.
ঘন্টাখানেকের মত সময় কেটে গেলো। আমি এখনও সহজ হতে পারছি না। বসেছিলাম রেস্টুরেন্টের দোতলায়। ঝুম বৃষ্টির কারণে একজোড়া দম্পতি ছাড়া আর কেউ নেই।

আবেগপূর্ণ সে দম্পতি আমাদের প্রেমিক-প্রেমিকা ভেবে নিশ্চিন্তে নিজেদের চুমুর রাজ্যে ডুবিয়ে রেখেছেন। অপ্সরী সেদিকে তাকাচ্ছে আর আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে।

হঠাৎ নিজের হাতে আরেকটা মোলায়েম হাতের স্পর্শ টের পেলাম। আমার হাতে বেশ রকমের টাকা গুঁজে দিলো সে।
- বিল টা দিয়ে দেবেন। আর একটা কথা,আশায় থাকবো। আমি যদি ভাগ্যবতী হই,হয়তো কোনোদিন কেয়ার পাবো।

সাথে সাথেই এক মিষ্টি চুম্বন অনুভব করলাম। সেকেন্ডের ক্ষণস্থায়ী সে চুম্বন দিয়েই অপ্সরী দৌঁড়ে নিচে নেমে গেলো। আমি মোহময়ীর গন্ধে মোহাচ্ছন্ন হয়ে রয়েছি।
.
.
ঘন্টাখানেক পরে বেরিয়ে এলাম সেখান থেকে। বৃষ্টি থেমে গেছে। রাস্তা সেই চিরচেনা ব্যস্ততায় ফিরে গেছে।
সেদিনের মত আজও ঘোরলাগা চেতনায় হাঁটছি আমি,হয়তো সেটাই প্রথম ছিলো না। ছেলেদের চরিত্র মেঘের মত বদলায়।

সে মিষ্টি গন্ধ টা আজও খুঁজি। নেশার জন্য নয়,আকুতির জন্য। আর কখনো দেখা হয় নি আমাদের,হবেও না। দুই পৃথিবীতে আছি আমরা।

যোগাযোগের কোনো চেষ্টা করবো না। যদি কখনো সম্ভব হয়,তোমার ব্যবহার করা একটা রুমাল পাঠিয়ে দিয়ো ওপার হতে। আমি যত্ন করে রেখে দেবো।

ডেঙ্গীর চুম্বন


কোনো এক মেঘার্ত-সকালে যখন কলেজে না গিয়া লেপমুড়ি দিয়া মহাসুখে নিদ্রায় আছি ঠিক,তখনি যদি ফোনে রিং বাজিয়া উঠে,আর কল ধরিবামাত্রই ওপাশ থাকিয়া কোন এক কন্যা বলিয়া উঠে,

- হ্যালো আব্বা,কই তুমি?

আমি তড়াক করিয়া লাফাইয়া উঠিয়া চতুর্পাশে তাকাইয়া তৎক্ষণাৎ বুঝি,নহে,আমি অদ্যবধি অবিবাহিতই রহিয়াছি। আমার কোনো কন্যা নাই আর থাকিলেও তাহা স্মরণে নাই। জ্ঞানীদের আবার স্মরণশক্তি বেজায় কম থাকে।
সুতরাং,ফোন কাটিয়া পুনরায় লেপমুড়ি নিশ্চিন্তে দেওয়া যায়।

পশ্চাদদেশে সর্বদা নাকি সুখ সয় না। স্বয়ং তের তলায় আসিয়াই ডেঙ্গী হুল ফুটাইয়া গেলো। বেগানা মশকীর চুম্বনে দেহখানায় যখন যৌবনের স্রোত বহিতেছিলো,পিতা আমারে উঠাইয়া নারায়ণগঞ্জে নিয়া আসিলেন।

আট-দশদিন কোন ফুটা দিয়া উবিয়া গেলো,টেরই পাইলাম না। চোখ মেলিতেই দেখি সামনে স্যালাইনের ব্যাগ ঝুলিতেছে। মাঝে মাঝে দুপুরে জ্ঞান ফিরিলে টের পাইতাম,আমার একমাত্র মুখপানে যেন আরও দশখানা মুখ হাঁ করিয়া চাহিয়া আছে।

ডেঙ্গু হইয়াছে,কম কথা নহে..!!

কেহ কেহ অতি উৎসাহে আঙ্গুরের পরিমাণ দুই কেজিতে তুলিয়াছে। বলা যায় না,কাজেও লাগিতে পারে। রোগীর অন্তিমকালে আঙ্গুরের জুড়ি মেলা ভার।

নারায়ণগঞ্জ আবার "হাত বাড়াইলেই শাবনূর" টাইপের শহর। দেউড়িতে দাঁড়াইয়া হাঁক পাড়িলে চৌষট্টি জেলারই বাসিন্দার দেখা পাওয়া যায়। অচেতনাবস্থায় কোনো এক খালাকে বলিতে শুনিয়াছিলাম,
- আই উ মা গো,আমরার ফুতটারে গতবছর কি জ্বালানডাই না দিলো গো...!!

তৎক্ষণাৎ ফোঁসফোঁস সুরে আরেক কন্ঠ ভাসিয়া উঠে,
- আঁর কি মনে অয় ফাহিমোর মা,ছেম্রাডার মাইট্যা জন্ডিস অইছে। অ সিফাতোর মা,মাডি পড়া আইন্যা দিমু নি?

এলাকার মুরুব্বী পুরুষগণ সে তুলনায় বেশ সাহসী। বাতের ব্যাথায় নিজদিগের হাড্ডি একপাশে সড়াইয়া দিব্যি উপদেশ দিতেছেন,
- চিকুনগুনিয়া? এ আর এমন কি..!! স্যালাইন খা।

- টাইফয়েড অইছে? এ আর এমন কি..!! স্যালাইন খা।

- ডেঙ্গু অইছে? এ আর এমন কি..!! স্যালাইন খা।

সম্ভবত শেষ পর্যায়ে এরূপও হইতে পারিতো,
- এইডস অইছে? এ আর এমন কি..!! স্যালাইন খা।

সারারাত রাস্তায় ঘুরিলাম,বৃষ্টিতে ভিজিলাম,সাইকেল চালাইয়া ঘর্মাক্ত হইলাম,কিচ্ছুটি হইলো না। বেগানা এক মশকীর কামড়ে দেহখানা যেন লাড়া দিয়া গেলো।

এরেই বুঝি কহে,হাতি ঘোড়া গেলো তল,মশা কয় কত জল?

যাহাই হউক,আগামীকল্য প্রত্যাবর্তন করিতেছি। বিগত একমাস কলেজমুখো হইনাই। বাসায় ঘুমাইয়াছি। ভয় ছিলো,না জানি টিসি দিয়া দেয়। এখন আর সে ভয় নাই।

সঙ্গে হপ্তাখানেক আগের ডেঙ্গু আর চিকুনগুনিয়ার সার্টিফিকেট আছে। ঠিকঠাকমতো ফিটিং মারিতে পারিলে আরও একমাস ঘুমোনোর বন্দোবস্ত করা যায় বৈ কি..!!


বি.এম.আই নিয়ে যত কথা

বি.এম.আই (B.M.I)

পরিপূর্ণ নাম "Body Mass Index" বা "দেহের ওজন সূচক।"
একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের দেহের ওজন মাত্রাতিরিক্ত কিনা তা নির্ণয়ের জন্য উচ্চতা ও ওজনের যে আনুপাতিক হার উপস্থাপন করা হয় তাকে বি.এম.আই বলা হয়।

মূলত,শরীর-স্বাস্থ্য কোন অবস্থায় আছে তা বোঝার জন্য দু'টো পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়।

১.সঠিক ওজন নির্ণয়

২.বি.এম.আই নির্ণয়

প্রথমটি নির্ণয় অপেক্ষাকৃত সহজ। আদর্শ ওজন এ ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করে। আদর্শ ওজন হচ্ছে সেটাই যেখানে ব্যক্তির উচ্চতার তুলনায় ওজন কতখানি আছে তার পরিমাপ।

নির্ণয়ের সূত্রটি হচ্ছে-
আদর্শ ওজন= উচ্চতা(সে.মি)-১০০

উদাহরণস্বরূপ,কারো উচ্চতা ৫'৫"=৬৫"=৬৫×২.৫৪ সে.মি=১৬৫.১ সে.মি  [যেহেতু,১"=২.৫৪ সে.মি]

সুতরাং,আদর্শ ওজন= ১৬৫.১-১০০= ৬৫.১ কিলোগ্রাম

সূত্রটি প্রয়োগ করে যদি কোনো ব্যক্তির আদর্শ ওজন আর মাপার পর প্রাপ্ত ওজনে বেশখানেক পার্থক্য ধরা পড়ে,তখন বুঝতে হবে ঐ ব্যক্তির শারীরিক ভারসাম্যহীনতা আছে।

তবে এ পদ্ধতিটি শুধুমাত্র প্রাপ্তবয়স্ক অর্থাৎ ১৮ বছরের বেশি হলেই প্রয়োগ করা যাবে।

ওজনের ব্যাপার তো গেলো।

সঠিকভাবে ওজন নির্ণয় দ্বারা স্বাস্থ্য স্বাভাবিক অবস্থায় আছে কি না তা বোঝা গেলেও যদি ফলাফলের পার্থক্য খুব বেশিই হেরফের হয় তখন স্বাস্থ্য টা আসলেই কোন পর্যায়ে আছে তা নির্ণয়ের জন্য বি.এম.আই প্রয়োগ করতে হয়।


সূত্রটি হলো-
বি.এম.আই= কেজি'তে ব্যক্তির ওজন÷মিটারে ব্যক্তির উচ্চতা²

ধরা যাক,কোনো ব্যক্তির ওজন ৭০ কেজি এবং উচ্চতা ৫'৭"
এ ক্ষেত্রে প্রথমেই উচ্চতাকে মিটারে রূপান্তরিত করতে হবে।
৫'৭"= ৬৭"= ৬৭×২.৫৪ সে.মি = ১৭০.১৮ সে.মি= ১.৭ মিটার
সুতরাং,বি.এম.আই= ৭০÷১.৭²
                            = ২৪.২২

এ সূত্রটি সর্বাধিক ব্যবহৃত হলেও এ পদ্ধতি ব্যতীত আরেকভাবেও মাপা যায়। সে ক্ষেত্রে ওজনকে পাউন্ড আর উচ্চতাকে ইন্ঞ্চিতে ধরা হয়।

বি.এম.আই গণনার পরবর্তী কাজই হলো ফলাফলটি তালিকার সাথে মিলিয়ে দেখা এবং ব্যক্তির স্বাস্থ্য কোন পর্যায়ে আছে তা নির্ণয় করা।
বি.এম.আই              ক্যাটাগরি
--------------           ------------
<১৮.৫০               ওজনহীনতা
১৮.৫-২৪.৯           স্বাভাবিক
২৫.০-২৯.৯           ওজনাধিক্য
৩০.০-৩৯.৯          স্হূলতা
>৪০.০                  চূড়ান্ত স্হূলতা

যদিও এক এক দেশে বি.এম.আই এর চার্ট এক এক রকম হয়,কেননা ভৌগলিক পরিবেশ,খাদ্য গ্রহণ,দেহাকৃতি স্হানভেদে ভিন্ন হয়।

বলে রাখা ভালো যে,এ ক্ষেত্রেও উপর্যুক্ত তালিকাটি প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য প্রযোজ্য।

শিশুদের ক্ষেত্রে (২-২০ বছর) একই সূত্র প্রয়োগ হলেও স্বাস্থ্যের পর্যায় নির্ণয়ের তালিকাটি ভিন্ন। একটি নির্দিষ্ট সীমার ভেতর শতকরা হারের মাধ্যমে সাধারণত নির্ণয় করা হয়। শতকরা হার ৫% এর নিচে হলে ওজনহীনতা,৫-৮৫% হলে স্বাভাবিক,৮৫-৯৫% হলে ওজনাধিক্য এবং ৯৫% এর বেশি হলে স্থূলতা।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে বি.এম.আই এর পাশাপাশি কোমর ও নিতম্বের মাপের অনুপাত দিয়েও স্থূলতা নির্ণয় করা হচ্ছে।
আদর্শ অনুপাত= কোমরের মাপ(সে.মি)÷নিতম্বের মাপ(সে.মি)
আদর্শ ফলাফল:
পুরুষদের ক্ষেত্রে <০.৯
মহিলাদের ক্ষেত্রে <০.৮
প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ: ১৯৮০ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ৩৩ বছরের পর্যবেক্ষণে দেখা যায় যে, ১৯৮০সালে ৭% প্রাপ্তবয়স্ক এবং ৩% শিশু ওজনাধিক্য বা স্হূলতায় আক্রান্ত হলেও ২০১৩ সালে তা দাঁড়ায় ১৭% প্রাপ্তবয়স্কে কিন্তু ৪.৫% শিশুতে। দেখা যাচ্ছে যে,স্হূলতা ২% থেকে ৪% এ বেড়ে দাড়িয়েছে প্রাপ্তবয়স্কদের;অন্যদিকে তা শিশুদের ক্ষেত্রে ১.৫%
অর্থ্যাৎ,প্রাপ্তবয়স্করা শিশুদের তুলনায় দিন দিন অধিক আক্রান্ত হচ্ছেন।
দেখা যাক কারণগুলো-
১. কায়িক পরিশ্রম না করা,একটানা বসে থেকে কাজ করা।
২.অপরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাদ্য গ্রহণ না করা,চর্বিযুক্ত ও চিনিযুক্ত খাদ্য গ্রহণ,অ্যালকোহল পান।
৩. বিষন্নতা,আশাহীনতা,রাগ কিংবা একঘেয়েমিতে অতিভোজন।
৪. নিদ্রাহীনতায় হরমোনজনিত পরিবর্তনে ক্ষুদাগ্রতা বাড়ায় অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহন।
৫. বংশগত কারণেও স্হূলতার সৃষ্টি হয়।
৬. পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম,কুসিং সিনড্রোম,হাইপারথায়রয়েডিজমে আক্রান্ত হলে স্হুূলতা দেখা দেয়।
৭. অ্যান্টিডিপ্রেজেন্টস কিংবা জন্মবিড়তিকরণ বড়িও স্হূলতার কারণ।
৮. সুস্বাস্থ্য এবং সুষম খাদ্য সম্পর্কে জ্ঞানের অভাব।
বি.এম.আই এর বিভিন্ন অবস্থার ফলাফল:
বি.এম.আই অতি কম হলে ওজনহীনতার সৃষ্টি হয়। ফলে রুগ্নতা,চেহারায় বলিরেখা,রক্তশূণ্যতা,শারীরিক দূর্বলতা,চর্মরোগ,চুল পড়া,দাঁত নস্ট হয়ে যাওয়া এবং হাড়ের ক্ষয় ঘটে।
আবার,বি.এম.আই অত্যধিক হলে ওজনাধিক্য কিংবা স্হূলতা সৃষ্টি হয়। ফলে হৃদরোগ,ডায়াবেটিস,স্তন ও কোলন ক্যান্সার,উচ্চ রক্তচাপ,স্ট্রোক,ডিজলিপিডেমিয়া,শ্বসনতন্ত্র-যকৃত-পিত্তথলির অসুখ এবং বন্ধ্যাত্ব দেখা দেয়।
মূলত চর্বির কারণেই স্হূলতার সৃষ্টি। পেটে,নিতম্বে,কোমরে চর্বিকোষ বেশি থাকে। তবে চর্বির বিতরণের উপর নির্ভর করে ঝূঁকিপূর্ণতা নির্ণয় করা যায়। দেহের আকার আপেল আকৃতির হলে তা অধিক ঝূঁকিপূর্ণ অন্যদিকে নাশপাতি আকৃতির হলে কম ঝূঁকিপূর্ণ। দেহের অন্যান্য অংশের তুলনায় পেটে জমাকৃত চর্বি (সেন্ট্রাল এদিপসিটি) অনেক বেশি বিপদজনক।
প্রতিকার: সুষম খাদ্য গ্রহণ,নিয়মিত ব্যায়াম,আবেগ নিয়ন্ত্রণ,কায়িক পরিশ্রম এবং পরিপূর্ণ নিদ্রা-ই যথেষ্ট স্হূলতা দূর করতে।
অনেক সময় দেখা যায় যে,সঠিক পরিমাণ খাদ্য গ্রহণ করলেও ওজনাধিক্যের সৃষ্টি হচ্ছে। এর কারণ হচ্ছে,যে পরিমাণ ক্যালরি দেহ গ্রহণ করছে সে পরিমাণ খরচ করছেনা। ফলে মেদ জমা হচ্ছে। আবার অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ করেও দেহের রুগ্নতা সারছে না। এর কারণ হচ্ছে,দেহের যে পরিমাণ ক্যালরি দরকার সে পরিমাণ পাচ্ছেনা। এমতাবস্থায়,চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
তবে নিয়মমাফিক জীবনযাপন করলে স্বাভাবিকভাবেই ফিটনেস বজায় রাখা যায়। মনে রাখতে হবে,
"স্বাস্থ্য সকল সুখের মূল নয়,সু-স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল।"




লেখকঃ মুয়িদুল ইসলাম সিফাত 
Green Life Medical College and Hospital
Dhaka-1205,Bangladesh
Batch: GMC-7

পোস্টটির দর্শক সংখ্যা-

ফিচার পোস্ট

দারুণ তিনটি টিনেজ মুভি

কৈশোরেতে প্রেমে না পড়লে বুড়ো বয়সে আপসোস করতে হয়। বয়ঃসন্ধির নতুন জগৎ,নতুন অনুভূতি,ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো পরবর্তীতে দারুণ স্মৃতি হয়ে আজীবন রয়ে যায়...

সর্বাধিক পঠিত